আরও প্রকাশ্যে বিএনপির ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক

বেশ কিছুদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে অন্যদেরও বর্জনের আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন অনেকে।

সরকার ও ভারতের সমালোচনায় মুখর থাকা ভার্চুয়াল জগতের পরিচিত কিছু মুখ এই আহ্বান জানালেও তা খুব একটা আলোচনায় আসেনি।

তবে গত ২০ মার্চ রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে হঠাৎ নিজের কাশ্মীরি শাল ছুড়ে ফেলে দিয়ে ভারতীয় পণ্য বর্জনের প্রচারের সঙ্গে সংহতি জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। অন্যদেরও সংহতি জানানোর আহ্বান জানান।

এরপর থেকে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক নিয়ে রাজনীতির ভেতরে-বাইরে চলছে নানা আলোচনা। এটি রিজভীর ব্যক্তিগত না কি দলীয় অবস্থান তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়। এমন অবস্থার মধ্যে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক সামনে নিয়ে এলো খোদ বিএনপি।

সোমবার (২৫ মার্চ) মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির উদ্যোগে নয়াপল্টনে হয় মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ। সমাবেশের মূল ব্যানারের নিচে ছিল ‘ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন’ সম্বলিত লেখা।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে পেছনে রেখে ফুটপাতে চেয়ার পেতে এ সমাবেশ করা হয়। সমাবেশের পেছনে একটি কাপড়ের ওপর বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা ছিল ‘ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন’।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বেশিরভাগ নেতা ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বললেও কেউ পণ্য বর্জনের বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।

bnp-2

সমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বক্তব্যে ভারতের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘ফকির আলমগীরের (প্রয়াত গণসঙ্গীত শিল্পী) একটা চমৎকার গান আছে… ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারো দানে নয়’।

আমরা রক্তের দাম দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। আমরা করো দয়ায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয় নাই। আজকে সেই বোধ নিয়ে রুখে দাঁড়ান… আন্তর্জাতিক বিশ্ব নিশ্চয়ই সেই বিষয়গুলো তারা দেখবে, দেখেছে অতীতে।

আর কোনো দেশ যদি আমাদেরকে মনে করে যে, আমাদের ওপরে প্রভুত্ব করবে… বাংলাদেশের মানুষ কোনোদিন সেই প্রভুত্ব স্বীকার করে নাই… মোঘল আমলেও করেনি, বৃটিশ আমলেও করেনি, পাকিস্তান আমলেও করেনি, এখনো করবে না।’

যদিও ভারতের চাদর শরীর থেকে ফেলে দেওয়ার পর ইস্যু নিয়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ভারতীয় পণ্য বর্জনের ঘোষণা দিতে পারেন। কিন্তু সব মহলে, জনগণের মাঝে এটি আজ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। সুতরাং ভারতীয় পণ্য বর্জনে আমরা যে সংহতি জানিয়েছি, তা বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে।’

নিজের চাদর ছুড়ে ফেলেই ক্ষ্যান্ত হননি রিজভী। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র ১২ দলীয় জোটও ভারতীয় পণ্য বর্জনের প্রচারে সংহতি জানিয়েছে।

প্রথম দিন দলের পক্ষ থেকে সংহতি জানানোর কথা বললেও পরে এ কাজকে ‘ব্যক্তিগত’ বলে দাবি করেন রিজভী।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের রাজনীতি, নির্বাচনে ভারতের হস্তক্ষেপের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিএনপি এই ইস্যুতে কথা বলে এলেও পণ্য বর্জনের ডাকের মতো কোনো সিদ্ধান্ত কিংবা বক্তব্য হাইকমান্ড থেকে কখনো দেওয়া হয়নি। হঠাৎ করে রিজভীর এমন কাণ্ড নিয়ে দলের ভেতরেও নানা আলোচনা চলছে। দলের কেউ কেউ এটাকে অতিউৎসাহী কর্মকাণ্ড বলেও মনে করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *