ঈদের আগে ব্যাংকে টাকা তোলার হিড়িক

চলতি সপ্তাহেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। আর একদিন পরেই ঈদের ছুটিতে যাচ্ছে ব্যাংকগুলো।

তাই ঈদুল ফিতরের ছুটির আগে ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকের টাকা তোলার হিড়িক লক্ষ্য করা গেছে। সকাল থেকে ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় প্রচুর গ্রাহকের উপস্থিতি ছিল।

প্রতিটি শাখায় দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষায় ছিলেন গ্রাহকরা। টাকা জমা দেওয়ার পরিমাণ কম থাকলেও উত্তোলন বেশি হওয়ায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা।

সোমবার (৮ এপ্রিল) রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা, পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যাংকের শাখাগুলো ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যাংকগুলোতে সকাল থেকেই ক্যাশ ও জমা কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন ছিল। নতুন নোট বিনিময়ের পাশাপাশি বিভিন্ন চালানপত্র, ডিপোজিটসহ বিভিন্ন সেবার বিল জমা দেওয়ার লাইনও লক্ষ্য করা গেছে।

অতিরিক্ত গ্রাহকের চাপে ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টারের কর্মকর্তাদের বেশ চাপে থাকতে দেখা গেছে। দুপুরে মতিঝিল এলাকার অগ্রণী ব্যাংকের হাটখোলা শাখায় গিয়ে দেখা গেছে গ্রাহকের ব্যাপক ভিড়। দীর্ঘ লাইনে টাকা উত্তোলনের জন্য গ্রাহক দাঁড়িয়ে ছিলেন।

অনেকে লাইনে অপেক্ষা করছেন নতুন টাকার জন্য। স্বাভাবিক দিনের সঙ্গে তুলনা করলে তিন-চার গুণ বেশি লেনদেন। বেশির ভাগই নগদ টাকা তুলছেন। গ্রাহককে চাহিদা মতো টাকা দেওয়া হচ্ছে, নগদ টাকার কোনো সংকট নেই।

এই ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, ঈদকে ঘিরে কেনাকাটা করে থাকেন নগরবাসী। এতে নগদ অর্থের প্রয়োজনে গ্রাহকরা ব্যাংকমুখো হন।

ব্যাংকের নগদ টাকা গ্রহণের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা নজরুল বলেন, টাকা তুলতে প্রায় আধা ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। কালকের পরে ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাবে। এবার বেশ কয়েকদিন ছুটি তাই কয়েকদিনের টাকা তুলতে এসেছি।

জহির নামে আরেকজন বলেন, আজকে অফিসের বেতন ঢুকেছে। টাকা তুলতে এসেছি। অন্যান্য দিনের থেকে আজকে বেশি ভিড় দেখছি।

একই অবস্থা দেখা যায় ইসলামী ব্যাংকের আরেক শাখায়, কথা প্রসঙ্গে এই শাখার এক কর্মকর্তা জানান, কয়েকদিন ধরেই গ্রাহকের অনেক চাপ। আজ ও কালকে চাপ একটু বেশি থাকবে। ঈদের ছুটির কারণে মানুষ বাড়ি যাবে।

শিল্প প্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের এ শাখায় অনেক প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তারাও কর্মীদের বেতন-বোনাস দেওয়ার জন্য টাকা উত্তোলন করছে। সব মিলিয়ে সকাল থেকেই প্রচুর চাপ। আমারাও নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছি। পাশের রূপালি ব্যাংকের আরেক শাখাতেও গ্রাহকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কমকর্তাদেরও যেন দম ফেলার ফুসরত নেই।

এদিকে, ঈদুল ফিতরের ছুটির সময় গ্রাহকের নির্বিঘ্নে লেনদেন নিশ্চিতে ব্যাংকের এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

একই সঙ্গে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস), পয়েন্ট অব সেল (পিওএস), ই-পেমেন্ট গেটওয়েসহ সব ডিজিটাল সেবা নিরবচ্ছিন্ন লেনদেন নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট এক নির্দেশনায় বলা হয়, এটিএম বুথ, পয়েন্ট অব সেল (পিওএস), ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ই-পেমেন্ট গেটওয়ে, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন লেনদেন নিশ্চিত করতে হবে। এসব লেনদেনে কোনোভাবেই গ্রাহক যেন হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

নির্দেশনায় সার্বক্ষণিক এটিএম সেবা চালু রাখা, বুথের কারিগরি ত্রুটি দ্রুততম সময়ে সমাধান করা এবং বুথে সার্বক্ষণিক পাহারাদারদের সতর্ক অবস্থানসহ অন্যান্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সার্বক্ষণিক পিওএস সেবা নিশ্চিত করা, জাল-জালিয়াতি রোধে মার্চেন্ট ও গ্রাহককে সচেতন করতেও ব্যাংকগুলোকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া ই-পেমেন্ট গেটওয়ের ক্ষেত্রে কার্ডভিত্তিক ‘কার্ড নট প্রেজেন্ট’ এবং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেনের ক্ষেত্রে ‘টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন’ ব্যবস্থা চালু রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *