ভাঙা হয়েছে জিয়ার ম্যুরাল, শামীম ওসমানকে দুষছে বিএনপি

 

তবে, ম্যুরাল ভাঙার জন্য নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানকে দুষছেন বিএনপির নেতারা। যদিও, এই অভিযোগকে পাত্তা দিচ্ছেন না ওই সংসদ সদস্য।

ম্যুরালটি ভাঙা হয়েছে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে যান মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান, সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার প্রধানসহ কয়েকজন নেতা।

সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সম্মানে ১৯৮১ সালে এই মিলনায়তনটিকে শহীদ জিয়া হল হিসেবে নামকরণ করা হয়।

তার ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে। মিলনায়তনটি জেলা প্রশাসনের অধীনে থাকায় প্রথমে আমরা ডিসির সাথে যোগাযোগ করেছি, তারা বলেছেন ম্যুরাল ভাঙার বিষয়ে তাদের কোন নির্দেশনা নেই।

সম্প্রতি জিয়া হল ভেঙে আরেকটি ভবন করার প্রস্তাব দিয়ে সংসদে বক্তব্য রেখেছিলেন শামীম ওসমান। আজকের এ ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় এটা সরকারি দলের নীলনকশার মাধ্যমে শহীদ জিয়ার এ ম্যুরাল কেটে ফেলে দেয়া হয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা।’

আবু আল ইউসুফ খান বলেন, ‘আমরা দেখেছি সংসদে দাঁড়িয়ে শামীম ওসমান জিয়া হল ভাঙার কথা বলেছেন। রাতের অন্ধকারে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে এ ম্যুরাল ভেঙে প্রমাণ করেছেন তিনি আসলে প্রতিহিংসাপরায়ন একজন রাজনীতিবিদ। তিনি শান্তিপূর্ণ কাজ করতে পারেন না। নারায়ণগঞ্জে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করতে এই কাজটি করেছেন তিনি।

ম্যুরাল ভাঙার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে ৭২ ঘন্টার মধ্যে পুনরায় ম্যুরালটি স্থাপন করার দাবি জানান বিএনপি নেতারা। অন্যথায় তারা আন্দোলনের দিকে এগোবেন বলে জানান সাখাওয়াত।

দিনের বেলায় জিয়া হলের চাবি থাকে ফলবিক্রেতা আরিফুর রহমানের কাছে। তার পিতা লুৎফর রহমান এই হলের কেয়ারটেকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সাতমাস আগে তার পিতা মারা যাওয়ার পর থেকে তিনিই তদারকি করছেন।

আরিফুর বলেন, ‘বুধবার রাতে বাসায় যাওয়ার সময়ও বিল্ডিংয়ের উপরে ম্যুরালটি দেখেছি। সকালে এসে দেখি ম্যুরালটি নেই। চাবি খুলে উপরে গিয়ে দেখি ম্যুরালটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভাঙা অবস্থায় সেটি ছাদের উপর পড়ে আছে।’

এদিকে, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, ভবনটি জরাজীর্ণ ছিল। এটি ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা তাদের ছিল। তবে এখনও এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কে বা কারা ম্যুরালটি ভেঙে সেই বিষয়ে তদন্তের জন্য পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৭৮ সালে নারায়ণগঞ্জ সফরকালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চাষাঢ়ায় ‘টাউন হল’ নামে ওই মিলনায়তনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ১৯৮১ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এমএ সাত্তার টাউন হল উদ্বোধনের সময় জিয়াউর রহমানের স্মৃতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে হলটির নাম রাখেন শহীদ জিয়া হল।

তবে, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর মিলনায়তটির নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তন’ রাখা হয়। ২০০১ সালে পুনরায় বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আবারও নাম পরিবর্তন করে শহীদ জিয়া হল করা হয়। পরে ভবনটির উপরের অংশে জিয়াউর রহমানের একটি ম্যুরালও স্থাপন করা হয়।

এদিকে, চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে এক সম্পূরক প্রশ্নে শামীম ওসমান জিয়া হলের জায়গায় নতুন ভবন নির্মাণ করে সেটিকে ‘ছয় দফা ভবন’ করার দাবি জানান।

ম্যুরালটি ভাঙার অভিযোগ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, ‘আমি শুনেছি বিষয়টি। ম্যুরালটি ভাঙা হয়েছে কিংবা ভেঙে পড়েছে; দুইটার একটা হতে পারে। কেননা ২০১৪ সালে ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল।

এখন যদি কেউ আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করে সেইটা তার বা তাদের ব্যাপার, এই ব্যাপারে আমি কোন মন্তব্য করবো না। কিন্তু হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী জিয়াউর রহমানের শাসনামল অবৈধ। আইন অনুযায়ী তো, তার ম্যুরাল বাংলাদেশের কোথাও থাকার কথা না। যদিও এইটা সরকারি ব্যাপার।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *