না.গঞ্জে অগ্নিঝুঁকিতে ফিউশন টাচ প্যাভিলিয়ন, লাইসেন্স ডিফিকাল্ট না বলছে কর্তৃপক্ষ !

বেইলী রোডে ভয়াবহ আগুনে হতাহতের পর রাজধানীর মত নারায়ণগঞ্জেও কঠোর অভিযান পরিচালনা করে সতর্ক বার্তা দিয়েছেন জেলা প্রশাসন। কিন্তু দু মাস পেরুতেই এবার অগ্নিঝুঁকি উপেক্ষা করে সর্বসাধারণের বিনোদন এবং ভোজন বিলাশের জন্য নারায়ণগঞ্জে প্রস্তুত করা হয়েছে ফিউশন টাচ প্যাভিলিয়ন। যেখানে অনুষ্ঠান, বারবিকিউ পার্টি সহ যেকোনো আয়োজনে বুকিংয়ের জন্য ইতমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির উদ্বোধন করে প্রচারণা চালানো হয়েছে। তবে অনুষ্ঠানস্থলে দেখা যায় নি একটিও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। কিংবা সাধারণ মানুষের যেকোনো দূর্ঘটনা প্রতিরোধে নেই তেমন কোনো সেফটি ব্যবস্থা।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ শহরের অদূরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্য্যালয়ের বিপরীত পাশে ধানসিঁড়ি আবাসিক এলাকার ৭ তলা ভবনের ছাদে প্রস্তুত করা হয়েছে ফিউশন টাচ ইভেন্ট প্যাভিলিয়ন। আয়োজকরা জানিয়েছেন, এটি ছালামত উল্লাহ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একটি প্রজেক্ট।

যে প্যাভিলিয়নে চাইলে নিজেরাই রান্না করে খেতে পারবে। তাছাড়া পঞ্চাশ উর্ধ ব্যাক্তিদের জন্য কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেয়া হবে। এ ছাদতলা প্যাভিলিয়নে অনুষ্ঠানের জন্য রাখা হয়েছে প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ জনকে নিয়ে যেকোন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা। তারপরেও নিরাপত্তার জন্য সামনের অনুষ্ঠানে ৩০ থেকে ৩৫ জন পর্যন্ত সিমাবদ্ধ রাখবে বলে প্রতিবেদককে জানান ফিউশন টাচ ইভেন্ট প্যাভিলিয়নের স্বত্তাধিকারী মোহাম্মদ হাসান খোকন।

কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে, ফিউশন টাচ ইভেন্ট প্যাভিলিয়নে প্রবেশ করতে হলে সরু গলি পথে পারি দিতে হয়। এরপর ভবনটির নীচে নেই পর্যাপ্ত প্রাইভেটকার পাকিংয়ের ব্যবস্থা। ভবনটির উপরতলায় যাওয়ার জন্য রয়েছে একটি মাত্র লিফ্ট। লিফ্টটি ছোট পরিসরে হওয়ায় সেখানে কিছু সংখ্যক মানুষই প্রবেশ করতে পারবে।

ভবনটির চারদিকে আবাসিক এলাকা ও হাজার হাজার মানুষের বসবাস। তারমধ্যে ছাদতলা পর্যন্ত আবদ্ধ দেয়ালে কোথাও পরিদর্শন মিলেনি একটি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র! এমনকি উপরতলায় গত বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন অসংখ্য মানুষের ভীড়ে গাদাগাদি অবস্থায় রোগে আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

তাছাড়া যেকোন দূর্ঘটনা হলে প্রাণে বেঁচে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ নেই কোনো বিকল্প পথ। একটি মাত্র সরু সিড়ি আর লিফ্টই সম্বল। তাছাড়া প্যাভিলিয়নে প্রবেশের সরু পথেই যদি আগুন লেগে যায় সেখান থেকেই বাঁচার উপায় নেই। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ফিউশন টাচ প্যাভিলিয়ন নামক অনুষ্ঠানস্থলটি। তাই এটাকে একটি সুরক্ষিত প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পর্যবেক্ষণ জরুরী বলে মনে করেন সচেতন মহল।

এদিকে জনসাধারণের নিরাপত্তায় অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র নেই কেন? আবাসিক ভবনে এ প্রতিষ্ঠান ঘোষণার আগে ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়া আছে কি না এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ফিউশন টাচ ইভেন্ট প্যাভিলিয়নের স্বত্তাধিকারী এবং উল্লেখিত ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান মিয়া খোকন জানান, এটিকে আমরা রেস্টুরেন্ট ডিক্লিয়ার করি নাই। এটা আমার নিজের ভবন। এটা কনভেনশন হল আর রেস্টুরেন্টের মাঝামাঝি, যাকে প্যাভিলিয়ন বলা হয়।

ফিউশন টাচ ইভেন্ট প্যাভিলিয়নের জন্য ট্রেড লাইসেন্স করা আছে। এখানে মানুষ আসবে রান্না করে খাবে, বিনোদন করবে। বারবিকিউ করবে। এখন বারবিকিউ এসবের জন্য যদি লাইসেন্স নিতে হয়। ফায়ার সার্ভিসের এমন ডিমান্ড করলে করবো, লাইসেন্স করা কোনো ডিফিকাল্ট কিছু না।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক মো. ফখর উদ্দিন বলেন, যদি র্সবসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়ে থাকে। জনগনের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে। যেহতু বিষয়টি আমরা অবগত হলাম। নির্দিষ্ট স্থানে পর্যবেক্ষন করে আমরা ব্যবস্থা নিবো।

উল্লেখ্য, রাজধানী বেইলী রোডে ভয়াবহ আগুনে হতাহতের ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছিলেন সকল প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জ জেলাতেও সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জেলাজুড়ে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করতে দেখা গেছে।

বেশ কয়েকটি হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও ইভেন্টের স্থান রুফটপে জরিমানা ও সতর্ক করা হয়েছে। এমনকি সিলগালা করতেও দেখা গেছে। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরিদর্শন ছাড়াই ফিউশন টাচ প্যাভিলিয়ন নামের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠা অসনি সংকেত দিচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। তাই যেকোনো দূর্ঘটনা হওয়ার আগেই প্রশাসনের পক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী স্থানীয়দেরও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *