জাল ভিসায় এয়ারপোর্টে ধরা, দালালের বাড়িতে ছয় যুবক

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার তিনগ্রামের ছয়জন যুবক দালালের খপ্পরে পড়ে জাল ভিসা নিয়ে শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধরা খেয়ে সেখান থেকে সরাসরি দালালের বাড়িতে এসে গত ছয়দিন ধরে অবস্থান করছেন।

আর বিদেশ নয়, দেওয়া টাকা ফেরত নিয়ে তারা নিজ বাড়িতে ফিরতে চান। তা না হলে দালালের বাড়িতেই তারা সবাই শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে আত্মহুতি করবেন বলে জানান।

আজ (২৮ মার্চ) বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার জিন্দারপুর গ্রামে দালালের বাড়িতে গিয়ে ওই ছয় যুবকের অবস্থান দৃশ্য দেখা যায়। দালালের বাড়িতে অবস্থানরত যুবকরা হলেন, উপজেলার পাঁচগ্রামের আতিকুল ইসলাম, খায়রুল ইসলাম, আব্দুল ওয়াদুদ, আলামিন তালুকদার, মোলামগাড়ীহাটের মেহেদী হাসান, জিন্দারপুর গ্রামের আবু তাহের।

অবস্থানরত যুবক, দালালের পরিবার ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, জিন্দারপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে দালাল সুলতান মাহমুদ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশে লোক পাঠান।

এলাকায় তাকে মাবুদ নামে চিনেন। সাড়ে তিনবছর আগে একই এলাকার পাঁচগ্রাম, মোলামগাড়ীহাট ও জিন্দারপুর গ্রায়ের ছয়জন যুবক একসাথে মালয়েশিয়াতে যাওয়ার জন্য দালাল মাবুদের সাথে ৩৩ লাখ টাকা চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তির পুরো টাকা তারা পরিশোধও করেছেন। তখন থেকে পার করে দিব, দিচ্ছি বলে সময় কালক্ষেপণ করেন মাবুদ। ছয় মাস আগে মালয়েশিয়া নয়, তাজিকিস্থানে পাঠানোর কথা হয়। তাতেও রাজি হন ওই যুবকরা। অনেক দেরিতে হলেও চলতি বছরের ১৮ মার্চ তাদেরকে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয় তাজিকিস্থানের উদ্দেশে ঢাকায়। ২০ মার্চ রাতে একবুক স্বপ্ন নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমানোর উদ্দেশ্য টিকিটসহ কাগজপত্র হাতে পেয়ে জাহালাল আন্তঃজাতিক বিমানবন্দরে উপস্থিত হন ওই ছয় যুবক। ‘বিধিরবাম’ এয়ারপোর্টে চেকিংয়ে গিয়ে জানতে পারেন ম্যানপাওয়ার, ভিসা, বিএমইটি স্মার্ট কার্ড জালিয়াতি করে তাদের ভুয়া কাগজপত্র দিয়েছেন দালাল মাবুদ। শুধুমাত্র বিমানের টিকেট ছিল আসল। এয়ারপোর্ট থেকে তাদেরকে ফেরত আসতে হয়। তাই তারা নিজ বাড়িতে না গিয়ে দালাল সুলতান মাহমুদের বাড়িতে অবস্থান করছেন।

এখানেই শেষ নয়, গত ছয়মাস আগে একই উপজেলার আতাহার গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে আমিরুল ইসলাম, জিন্দাপুর গ্রামের মোশারফের ছেলে মোহসিন আলী, বেলগড়িয়া গ্রামের ফরিদুলের ছেলে ফয়সাল, মহেশপুর গ্রামের ইউনুসের ছেলে রিমন, পাঁচগ্রামের মৃত মজিদের ছেলে মোস্তফাসহ আরও অনেককেই মালয়েশিয়াতে একই কৌশলে পাঠিয়েছে দালাল মাবুদ। তারা বর্তমানে কাজ না পেয়ে মাবুদের লোকজনদের কাছে বন্দী অবস্থায় মালয়েশিয়াতে জীবন যাপন করছেন।

অবস্থানরত যুবক আতিকুল ইসলাম বলেন, জমি বন্ধক রেখে দালাল মাবুদকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিয়ে আজ বড় বিপদে পড়েছি। সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। ছয়দিন ধরে এ বাড়িতে অবস্থান করছি। পুলিশ নয়, আরমা নিজেরাই এর সমাধান চাই। টাকা না পাওয়া পর্যন্ত এই বাড়ি থেকে যাবো না। কপালে যা আছে তা হবেই।

আরেক যুবক আবু তাহের বলেন, মালয়েশিয়াতে যাওয়া হয়নি তাতে কোনো সমস্যা নেই। তাজিকিস্থানে যাওয়ার দিনে কেন ভ‚য়া কাগজপত্র দিয়ে আমাদেরকে ফাঁসানো হলো। আমরা আর বিদেশে যাবো না, টাকা ফেরত চাই। তিনি আরও বলেন, মাবুদের সাথে সমাধানের জন্য আমরা বসেছিলাম কিন্তু ৯৯৯ এ ফোন করলে মাবুদকে পুলিশ এসে থানায় নিয়ে যায়। পরে আমরাও থানায় গিয়েছিলাম। পুলিশ মাবুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে বলেছিল কিন্তু আমরা অভিযোগ করিনি। পরে পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছে। এরপর থেকে মাবুদ পলাতক।

দালাল সুলতান মাহমুদ ওরফে মাবুদ বলেন, আমি যে এজেন্সির মাধ্যমে তাদেরকে পাঠাচ্ছি মূলত তারাই এসব ভ‚য়া কাগজপত্র প্রস্তুত করেছে। তারা যে ভ‚য়া কাগজপত্র করেছে তার কিছুই জানিনা। টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে আমি তাদের নিকটে সময় চেয়েছি। তাদের টাকার ব্যবস্থা করছি। ছয় মাস আগে মালয়েশিয়াতে যাদেরকে পাঠিয়েছেন তারা এখন বন্দি এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ পায়নি, তার হেপাজতেই তারা রয়েছেন। খরচ যা লাগছে তিনিই দিচ্ছেন। কয়েকদিনের মধ্যে তাদেরও ব্যবস্থা হবে।

কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াসিম আল বারী বলেন, ৯৯৯ এ কল পেয়ে পুলিশ পাঠিয়ে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতারিত যুবকদের অভিযোগ দিতে ডাকা হয়েছিল কিন্তু তারা অভিযোগ দিতে নারাজ। মাবুদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *