পল্লবীতে পূর্ব শত্রুতার জেরেই যুবককে হত্যা, এখনও অধরা দুই আসামি

রাজধানীর পল্লবীর স্বপ্ননগর আবাসিক এলাকায় রিহান ইসলাম ওরফে পাভেল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পল্লবী থানা পুলিশ। এর বাইরেও নতুন করে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। 

তারা হলেন- রায়হান বাবু (২৪), সোহেল তোতা মামা (২৪) ও বাচ্চু ওরফে কাজল বাচ্চু (২৩)।  এই মিলে একই ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট আটজনকে গ্রেফতার করা হলো।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) টাঙ্গাইল, বরগুনা ও বরিশাল মহানগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে ডিবি। এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন ডিবির পল্লবীর জোনের এডিসি রাসেদ হাসান। তবে এ ঘটনায় এখনও দুই আসামি অধরা। তাদেরকে খুঁজছে পুলিশ। তারা হলেন- তাজমুল ও হানিফ। তাজমুল পাভেলকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল।

ডিবি বলছে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরেই পাভেলকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। এ হত্যার মূলহোতা হাবিব ছাড়াও ৮ থেকে ১০ জন অংশ নেয়।

হত্যার শিকার পাভেলের বাড়ি নেত্রকোণা জেলার বারহাট্টা উপজেলায়। তার বাবার নাম শায়েস্তা খান। পাভেল থাকতেন বাড্ডার পাঁচতলা বাজার এলাকায়। পাভেল বাসচালকের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু পরিবার বলছে, তিনি মোটরসাইকেল রাইড শেয়ার করতেন। তবে পুলিশের দাবি, পাভেল একজন মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ী ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

তিনি জানান, গত ১৪ এপ্রিল বিকেলে বাড্ডার পাঁচতালা বাজার এলাকার বাসা থেকে ডেকে তাজমুল পাভেলকে ডেকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে পল্লবীতে নেয়। এরপর সেখানে আগে থেকে স্বপ্ননগর আবাসিক এলাকার টেকেরবাড়ি এলাকায় গণপূর্তের পুকুরের উত্তরপাড়ে ছিলেন হত্যাকারীরা। সেখানে তাদের সাথে মাদক সেবন করেন পাভেলও। পরে ঘটনাস্থলে হাবিব পৌঁছালে তারা মিলে পাভেলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এরপর চাকু ও ছুরি দিয়ে তাকে এলোপাতারি কোপাতে থাকে। এরপর পাভেল নিস্তেজ হয়ে পড়লে তারা তাকে পুকুরের পানিতে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়।

তিনি আরও জানান, পাভেলের মরদেহের সুরতহাল অনুযায়ী তার পিঠে ছোট বড় ২২টি, মাথায় ৮টি ধারালো অস্ত্রের আঘাত পাওয়া গেছে। এছাড়াও মাথার পেছনে প্রায় তিন ইঞ্চি লম্বা আঘাতের চিহ্ন, কোমরে চারটি ধারালো অস্ত্রের ক্ষত। ছোট বড় মিলে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ৪৫টি ধারালো অস্ত্রের কোপ দেওয়া হয়েছিল। যা সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে পুলিশ।

হারুন বলেন, পাভেল ও হাবিবের মধ্যে মারামারি হয়েছিল। পাভেল হাবিবের হাতে কোপ দিয়েছিল। সেই ঘটনায় ২০২৩ সালে ২৮ ডিসেম্বর বাড্ডা থানায় মামলা হলে পাভেল গ্রেফতার হন। পরে  তিনি জেল থেকে জামিনে বের হয়ে আসেন। কিন্তু হাবিব সুযোগ খুঁজছিল তাকে হামলার প্রতিশোধ নেবেন। হত্যার আগে কয়েকবার চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু ব্যর্থ হন।

তিনি আরও বলেন, এ হত্যায় হাবিবের বন্ধু তাজমুল ও আপন ভাই হানিফ এবং আনিছসহ কয়েকজন অংশ নেয়। তারা সরাসারি পাভেলকে কুপিয়ে হত্যা করে। যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা সরাসরি হত্যায় জড়িত ছিল।

গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার(এডিসি) মো. রাশেদ হাসান জানান, পাভেল হত্যায় এখনও দুজন পলাতক রয়েছে। পাভেল হত্যায় ব্যবহৃত আর.টি.আর মোটরসাইকেল উদ্ধার করা সম্ভব হলেও পাভেলকে তুলে নিয়ে আসা তাজমুল ও হাবিবের আরেক ভাই হানিফ এখনও পলাতক।

এর আগে, সোমবার (১৬ এপ্রিল) এ ঘটনায় নিহতের মা পারুল বাদী হয়ে পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

এ মামলায় হাবিব (২৮), হানিফ (২৬), আনিছ (২২), রায়হান নানু (২২), মিলন (৩৭), ও জনি (২৬) ছাড়া আরও ৫/৬ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *