কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আইএমইআই নম্বর বদলে দিতো তারা

মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন চক্রের ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তারা ছিনতাই হওয়া ফোনগুলো হাতে পাওয়ামাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ফোনের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে ফেলতো।

এরপর সেগুলো বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হতো। তবে তার আগে তারা অন্যান্য ছিনতাইকারির কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন স্বল্প মূল্যে ক্রয় করতো। গ্রেফতারকৃত দেলোয়ার এবং আবুল মাতুব্বর এসব মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তনের অন্যতম কারিগর।

সোমবার (১ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর গুলিস্তান, শনির আখড়া, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও এবং নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২০ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব-৩।

তাদের গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- হাফিজুর রহমান (৩৫), রনি আহমেদ ইমন (২৯), জসিম উদ্দিন (৩৫), জামাল উদ্দিন (৫০), আবুল মাতুব্বর (৪২), আহম্মদ আলী (৩৫), কামাল (৪০), বাপ্পি (২৯), আবিদ হোসেন সনু (৩৮), রবিন ভূইয়া (২১), আরিফুল হোসেন (২২), ইব্রাহিম মিয়া (৪০), সুজন (২৯), দেলোয়ার (৩৩), আব্দুর রহমান (১৯), রাজু (২৭), জিহাদ হোসেন (২৪), মুনাইম (৩৮), রাজু (৪৫) ও রফিক (৩৮)।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে এ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে এসব বিষয়ে জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

431808363_427487616628963_2879530710714426345_n

তিনি জানান,  তারা মূলত ৪টি চক্রে বিভক্ত হয়ে দীর্ঘ ৫-৬ বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এসকল মোবাইল চোরাকারবারির সাথে জড়িত রয়েছে। তারা মোবাইল চুরি, ছিনতাই ও আইএমইআই পরিবর্তনের কারিগর।

চক্রটি চোরাইকৃত মোবাইল ফোনগুলো বিক্রির জন্য বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজ করে থাকে। গ্রেফতারকৃত আব্দুর রহমান, রবিন ভূইয়া ও হাফিজুর রহমান মোবাইল ছিনতাই করে পরবর্তীতে চক্রের মূলহোতা রাজু, সুজন ও আবুল মাতুব্বরসহ অন্যান্যদের নিকট স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে দেয়।

আরও পড়ুনঃ বিদেশে পাঠানোর নামে বাবা-ছেলের প্রতারণা, ভুক্তভোগী দেড় হাজার 

গ্রেফতারকৃত দেলোয়ারের নেতৃত্বাধীন চক্রটি গুলিস্তান এলাকায় সক্রিয়। এ চক্রের নিকট হতে ২৯১টি স্মার্ট ফোন এবং ১৭৯টি বাটন ফোন উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আরিফুলের নেতৃত্বাধীন চক্রটি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকায় সক্রিয়।

এ চক্রের কাছ থেকে ১০৬টি স্মার্ট ফোন এবং ৫৯টি বাটন ফোন উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আবুল মাতুব্বর নেতৃত্বাধীন চক্রটি মোহাম্মদপুর এলাকায় সক্রিয়। এ চক্রের কাছ থেকে ৯১টি স্মার্ট ফোন এবং ২৪টি বাটন ফোন উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত ইমনের নেতৃত্বাধীন চক্রটি খিলগাঁও এলাকায় সক্রিয়। এ চক্রের কাছ থেকে ৫৪টি স্মার্ট ফোন এবং ৭৯টি বাটন ফোন উদ্ধার করা হয় বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, চুরি ও ছিনতাইকৃত মোবাইল বিক্রির সময় তারা ক্রেতাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়াতে আইএমইআই পরিবর্তনের নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। পাশাপাশি তারা মোবাইলের কেসিং, ডিসপ্লেও পরিবর্তন করে ফেলে।

গ্রেফতারকৃতরা নিজেরা সকলেই চোরাইকৃত মোবাইলের পরিবর্তিত আইএমইআই নম্বরের ফোন সেট ব্যবহার করে থাকে। গ্রেফতারকৃত এই চক্র ২০ হাজারের অধিক মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করে বিক্রি করেছে বলে জানায়। ব্রান্ড এবং কোয়ালিটি ভেদে এসব মোবাইলের দাম ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

র্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত দেলোয়ারের বিরুদ্ধে রাজধানীর বংশাল, শাহবাগ এবং কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। দেলোয়ারের সহযোগী রাজু এবং জিহাদ এর বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

এছাড়াও গ্রেফতারকৃত অপর মূলহোতা আরিফুল এর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানায় মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামিদের মধ্যে মোনায়েম, রফিক ও আরিফুল ইতোপূর্বে র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে পরবর্তীতে জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও পূর্বের পেশায় জড়িয়ে পড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *