Category: অন্যান্য

  • বাংলা নববর্ষ: বাঙালির প্রাণের উৎসব

    বাংলা নববর্ষ: বাঙালির প্রাণের উৎসব

    ড.ফোরকান আলী

    বাংলা নববর্ষ। উৎসবে-আনন্দে প্রতিবছর এই দিনকে বরণ করে নেই আমরা বাঙালিরা। আমাদের দেশে এই দিনটি সরকারি ছুটির দিন। পহেলা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিন। এ দিনটি বাংলাদেশে নববর্ষ হিসেবে পালিত হয়। এটি বাঙালির সার্বজনীন প্রাণের উৎসব। অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উদযাপিত হয় বাংলা নববর্ষ। নতুন আলোয় উদ্ভাসিত একটি নির্মল সকাল, একটি উজ্জ্বল দিনের প্রতীক্ষায় থাকে গোটা বাঙালি জাতি।

    পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশের এমনই উৎসব-যা ধর্ম, সমাজ, বয়স ও বৃত্তির সীমা পেরিয়ে সর্বত্র একাকার। নববর্ষের আনন্দ চিত্তে নতুনের জাগরণ ঘটায়। উৎসবের মধ্যে মানুষ নিজেকে খুঁজে পায় বৃহত্তরের গণ্ডিতে। রবীন্দ্রনাথ যেমনটা বলেছেন, ‘প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র দীন একাকী কিন্তু উৎসবের দিনে মানুষ বৃহৎ; সেদিন সে সব মানুষের সঙ্গে একত্র হইয়া বৃহৎ, সেদিন যে সব মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করিয়া মহৎ।’

    পহেলা বৈশাখ নতুন আঙ্গিকে জীবন গড়ার শপথের দিন। এদিন রাষ্ট্রীয় কর পরিশোধের অঙ্গীকার গ্রহণের দিন ছিল একদা। দেনা-পাওনা হালনাগাদ করার দিন। ব্যবসায়ীদের হালখাতা খোলার দিন। পারস্পরিক সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টির প্রেরণার দিন। একদা ফসলি কর পরিশোধের সঙ্গে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাবোধ জাগানোর দিন ছিল। বাঙালি জীবনে দীর্ঘকাল ধরে পহেলা বৈশাখের অনুষঙ্গ হচ্ছে ‘হালখাতা’। উদ্দেশ্য হচ্ছে ফসলি কর পরিশোধের আনন্দ প্রকাশ করা এবং ব্যবসায়ের হিসাব ও খাজনা ‘রাজকীয়’ খাতায় হালনাগাদ রাখা। এ উপলক্ষে রাজা-জমিদারকে প্রজারা তাদের সৃজনশীল পণ্য ও সূচিকর্ম উপহার দিত। রাজা-জমিদাররাও প্রজাদের কর রেয়াত ও ইনাম দিতেন।

    মানুষের নৈপুণ্য প্রদর্শন ও সাংবাৎসরিক প্রয়োজনীয় অথবা শৌখিন পণ্যের বেচাকেনার জন্য বৈশাখীমেলা লোকবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য। মানুষ এই উৎসবের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে মোঘল আমল থেকেই। অবশ্য রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘মানুষের উৎসব কবে? মানুষ যেদিন আপনার মনুষ্যত্বের শক্তি বিশেষভাবে স্মরণ করে, বিশেষভাবে উপলব্ধি করে।’ সেই দিন হতে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি জাতি নতুন বর্ষ পালন করে আসছে নিজ নিজ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সমুন্নত রেখে। রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে একটি নতুন সৌর সনের উদ্ভাবন করা হয়। ফসলি সন হিসেবে এই বাংলা সন বাঙালীর জীবনে নিয়ে আসে প্রাণের স্পন্দন আজও।

    বাংলা বর্ষপঞ্জির ইতিকথা

    আমাদের দেশে প্রচলিত বঙ্গাব্দ বা বাংলা সন মূলত হিজরী সনেরই একটি রূপ। মূল হিজরী পঞ্জিকা চন্দ্র মাসের ওপর নির্ভরশীল। চন্দ্র বছর সৌর বছরের চেয়ে ১১/১২ দিন কম হয়। কারণ সৌর বৎসর ৩৬৫ দিন, আর চন্দ্র বছর ৩৫৪ দিন। এ কারণে চন্দ্র বছরে ঋতুগুলো ঠিক থাকে না। চাষাবাদ এবং এ জাতীয় অনেক কাজ ঋতুনির্ভর এজন্য মোগল সম্রাট আকবরের সময়ে প্রচলিত হিজরী চন্দ্র পঞ্জিকাকে সৌর পঞ্জিকায় রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্রাট আকবর তার দরবারের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লাহ শিরাজীকে হিজরী চন্দ্র বর্ষপঞ্জীকে সৌর বর্ষপঞ্জীতে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব প্রদান করেন। ৯৯২ হিজরী মোতাবেক ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আকবর এ হিজরী সৌর বর্ষপঞ্জীর প্রচলন করেন। তবে, তিনি ঊনত্রিশ বছর পূর্বে তার সিংহাসন আরোহণের বছর থেকে এ পঞ্জিকা প্রচলনের নির্দেশ দেন। এজন্য ৯৬৩ হিজরী সাল থেকে বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়। ৯৬৩ হিজরী সালের মুহাররাম মাস ছিল বাংলা বৈশাখ মাস, এজন্য বৈশাখ মাসকেই বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস এবং ১ বৈশাখকে বাংলা নববর্ষ ধরা হয়।

    বাংলা নববর্ষ উৎসবের সূচনা

    বাংলা নববর্ষ পালনের সূচনা হয় মূলত সম্রাট আকবরের সময় থেকেই। সে সময় বাংলার কৃষকরা চৈত্র মাসের শেষদিন পর্যন্ত জমিদার, তালুকদার এবং অন্যান্য জমিদারের খাজনা পরিশোধ করত। নববর্ষের প্রথম দিন জমিদারগণ তাদের মিষ্টিমুখ করাতেন। এ উপলক্ষে তখন মেলা এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। ক্রমান্বয়ে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে পহেলা বৈশাখ আনন্দময় ও উৎসবমুখী হয়ে ওঠে এবং বাংলা নববর্ষ হিসেবে পালিত হতে থাকে। অতীতে বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। তৎকালীন রাজ পুণ্যাহই বর্তমানের ‘হালখাতা’ বা ‘গদিসাইত’।

    উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে পুণ্যাহ উৎসব নববর্ষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় এবং এরপর থেকে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে পুণ্যাহ অনুষ্ঠান চলতে থাকে। ১৯৫০ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বিলুপ্ত হওয়ার পর থেকে পুণ্যাহ উৎসবও হারিয়ে যায়। এটি পুরোপুরিই একটি অর্থনৈতিক ব্যাপার। গ্রামে-গঞ্জে-নগরে ব্যবসায়ীরা নববর্ষের প্রারম্ভে তাদের পুরোনো হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করে হিসাবের নতুন খাতা খুলতেন। এ উপলক্ষে তারা নতুন-পুরাতন গ্রহীতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ করতেন এবং নতুনভাবে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগসূত্র স্থাপন করতেন। চিরাচরিত আচার-অনুষ্ঠানের এই রেওয়াজের প্রচলন আজও রয়েছে দেশের সর্বত্র।

    গ্রাম-বাংলার বৈশাখী উৎসব

    বাংলার গ্রামে বৈশাখী উৎসব চলে বেশ কয়েকদিন। আর এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণই হচ্ছে বৈশাখী মেলা। কী আছে ঐ মেলায়? নানান ধরনের গানের আসর বসে সেখানে। আসরে গান গাইতে নানা গ্রাম থেকে আসে কত গায়ক, বাউল আর নাচের দল। আসে যাত্রাপালার অভিনয়শিল্পীরা। গায়কের দল পরিবেশন করে নানা ধরনের গান। যেমন-পালাগান, জারিগান, গম্ভীরা গান, কবি গান, বাউল গান, মুর্শিদী, মারফতি, ভাটিয়ালী আরও কত ধরনের গান। অভিনয়শিল্পীরা পরিবেশন করেন যাত্রাপালা। লাইলী মজনুর পালা, ইউসুফ জুলেখার পালা, রাধা কৃষ্ণের পালার আসর দেখে গ্রামের মানুষ কেঁদে বুক ভাসিয়ে দেয়। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এ আসর চলে। সবকিছু ছাড়িয়ে সবার মূল আকর্ষণ ও আগ্রহ থাকে পুতুলনাচ আর নাগরদোলায়। এছাড়াও মেলায় পাওয়া যায় বাংলার ঐতিহ্যবাহী খাবার পিঠাপুলি, মন্ডা-মিঠাই, বিভিন্ন ধরনের আচার ও হাতে তৈরি চিত্রকর্ম, খেলনা, মাটির পুতুল, জামা কাপড়, বাহারি খেলনা ইত্যাদি। হারিয়ে যাওয়া সেই উৎসবগুলোর মধ্যে আছে- খাজনা আদায়ের বার্ষিক উৎসব- পুণ্যাহ, ঘুড়ি উৎসব, ঘোড়াদৌড়, ষাড়ের লড়াই, মোরগ লড়াই, নৌকাবাইচ আরও কত কিছু।

    শহুরে বৈশাখী উৎসব

    বাংলাদেশে সবচাইতে বর্ণিল বৈশাখী উৎসব উদযাপিত হয় ঢাকা এবং চট্টগ্রামে। ভোর হতেই হাজার হাজার নানাবয়সী মানুষ জমা হয় ঢাকায় রমনার বটমূলে ও চট্টগ্রামে ডিসি হিলের পাদদেশে। ছায়ানটের শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘এসো হে বৈশাখ’ গানটি গেয়ে নতুন বছরের নতুন দিনকে বরণ করে নেন। এছাড়াও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলার। ঢাকার মেলাতেও মূল আকর্ষণ থাকে ঐ নাগরদোলাই। সববয়সী মানুষই খুব আগ্রহ নিয়ে নাগরদোলায় চড়ে। নব্বইয়ের দশক থেকে বৈশাখে গ্রামের হালখাতার হাওয়া ছড়াতে থাকে শহরে, জড়াতে থাকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডর সঙ্গে। লোকজ মেলা রূপ নেয় জাতীয় উৎসবে। ফলে পহেলা বৈশাখ লোকজ উৎসবের গন্ডি পেরিয়ে জড়িয়ে গেছে করপোরেট দুনিয়ার সঙ্গেও। একসময় বৈশাখী মেলায় থাকত শুধু মাটির পুতুল, মুড়ি-মুড়কি, খই, বাতাসা, মাটির ফুলদানি, বাঁশের মগ, বেত বা কাঠের কারুকার্য করা আয়না, কাঁসা-পিতলের শোপিস, তালপাতা কিংবা সাদা কাপড়ে হাতের কারুকার্যময় হাতপাখা, চড়কি আর মুখোশ। বৈশাখী উৎসব আজ আর সেখানে আটকে নেই। পণ্য উৎপাদন, বিপণন আর প্রসারে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশেষ পরিকল্পনা যোগ হয়েছে বৈশাখকে ঘিরে। দেশী ফ্যাশন, দেশী খাবার, হ্যান্ডিক্র্যাফটস আর হাতে তৈরি খেলনার শিল্পগুলো সারা বছরই থাকে বৈশাখের অপেক্ষায়।

    আদিবাসীদের বৈসাবি উৎসব

    বৈসাবি বাংলাদেশে তিন আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব। বৈসু, সাংগ্রাই, বিজু এই তিন নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে বৈসাবি নামের উৎপত্তি। তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালন করে বাংলা নববর্ষ। পুরনো বছরের কালিমা আর জীর্ণতাকে ধুয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয় তারা। আদিবাসীরা বর্ষবরণ উৎসব পালন করে বিভিন্ন নামে। কেউ বৈসু, কেউ সাংগ্রাই আবার কেউ বিজু। বর্ষবরণ উৎসবকে ত্রিপুরারা বৈসু, মারমারা সাংগ্রাই ও চাকমারা বিজু বলে অভিহিত করে এবং এগুলো বৈসাবি নামে পরিচিত। সাধারণত বছরের শেষ দুই দিন এবং নতুন বছরের প্রথম দিন বর্ষবরণ উৎসব বৈসাবি পালিত হয় বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায়।

    ত্রিপুরাদের বৈসাবি উৎসব

    ত্রিপুরাদের বর্ষবরণ উৎসবের নাম বৈসু। বৈসু উৎসব এদের জীবনের সবচেয়ে বড় উৎসব। বৈসু উৎসবে একটানা তিন দিন হারি বৈসু, বিসুমা বৈসু ও বিসিকাতাল বা আতাদাং বৈসু নামে পালন করা হয়। বৈসু উৎসবের প্রথম দিন হারি বৈসু। এই দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে তারা বসতবাড়ি, কাপড় চোপড় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে। ফুল দিয়ে ঘরবাড়ি সাজায়। গবাদিপশুদের গোসল করানো হয় এবং ফুল দিয়ে সাজানো হয়। শিশুরা বাড়ি বাড়ি ফুল বিতরণ করে। তরুণ-তরুণীরা প্রিয়জনকে ফুল উপহার দেয়। দেবতার নামে নদীতে বা ঝর্ণায় ফুল ছিটিয়ে খুমকামীং পূজা দেওয়া হয়। কেউ কেউ পুষ্পপূজা করে। এদিন নারীরা বিন্নি চালের পিঠা ও চোলাই মদ তৈরি করে। পুরুষেরা বাঁশ ও বেত শিল্পের প্রতিযোগিতা ও খেলাধুলায় মেতে উঠে। হারি বৈসু উৎসবের দিন থেকে এরা গরয়া নৃত্য পরিবেশন শুরু করে। উৎসবের দ্বিতীয় দিন বিসুমাতে নববর্ষকে স্বাগত জানায়, ধূপ, চন্দন ও প্রদীপ জ্বেলে পূজা দেয় ও উপাসনা করে। সবাই গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরে বেড়ায়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে পাচন, সেমাই ও মিষ্টি খায়। এছাড়া এদিন তারা নিরামিষ ভোজন করে। কোনো প্রাণি বধ করে না। অনুষ্ঠানের তৃতীয় দিন বিসিকাতালে আমিষ খাবার গ্রহণে বাধা নেই। এদিনও ফুল দেওয়া হয় ও উপাসনা করা হয়। তারা বয়োজ্যেষ্ঠদের গোসল করিয়ে পায়ের কাছে পূজার নৈবেদ্য হিসেবে ফুল রাখে এবং প্রণাম করে। কেউ যেন না খেয়ে ফিরে না যায় সেজন্য সারাদিন ঘরের দরজা খোলা থাকে। এতে গৃহস্থের কল্যাণ হবে বলে ত্রিপুরারা মনে করে।

    নববর্ষের এই শোভাযাত্রা যে শুধু বাংলার গ্রাম ও শহরের চিত্রকে তুলে ধরেছে তা-ই নয়, বাংলাদেশের আদিবাসীদের জীবনের প্রতিচ্ছবিকে তুলির আঁচড়ে অবয়বের অবকাঠামোর মাঝে অপরূপভাবে দৃশ্যমান করে তোলে প্রতিবছর এই ১ বৈশাখের প্রথম প্রহরে। ইউনেস্কো বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আবেদনক্রমে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০ নবেম্বর বাংলাদেশের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ কে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অধরা বা ইনট্যানজিবল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শান্তি, গণতন্ত্র ও বাঙালি জাতিসত্তার ঐক্যের প্রতীক হিসেবে পরিগণিত। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে বছরের প্রথম দিনে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রার’ মাধ্যমে অপশক্তির অবসান এবং বাংলাদেশের মানুষ কল্যাণময় ভবিষ্যতের আশা ব্যক্ত করে চলেছে। প্রাচীন আরবে ‘নওরোজ’ ও ‘মিহিরজান’ নামক যে দুটি উৎসব ছিল, এর প্রথমটি ছিল সন কেন্দ্রিক। ভারতীয় উপ-মহাদেশ দীর্ঘদিন মোগল শাসনাধীনে থাকায় সেখানেও নওরোজ উৎসব উদযাপিত হতো। কিন্তু বাংলা সন প্রবর্তনের পর নওরোজ উৎসবের স্থলে স্থান করে নিয়েছে পহেলা বৈশাখের উৎসব। পহেলা বৈশাখ আমাদের জাতীয় জীবনের এক বিশেষ দিন। পুরোনো বছরের যত না পাওয়া, হতাশা, দুঃখ আর ক্ষোভ, সব আমরা ভুলে যাই। আর শুরু হয় এক নতুন বছরের, যেই বছরে আমরা নতুন নতুন সব আশা আর স্বপ্নে বুক বাঁধি। আর এমনি সব নতুন স্বপ্ন আর নতুন আশা দিয়েই তো এগিয়ে যায় আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। কালক্রমে বাংলা সন কেন্দ্রিক এই উৎসব বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর সার্বজনীন জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়।

  • বিনিয়োগ সম্মেলনে কেমন সাড়া পেলো বাংলাদেশ?

    বিনিয়োগ সম্মেলনে কেমন সাড়া পেলো বাংলাদেশ?

    ৭ থেকে ১০ এপ্রিল রাজধানী ঢাকায় হয়ে গেলো বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫। দেশি-বিদেশি কমপক্ষে সাড়ে চারশোর মতো বিনিয়োগকারী অংশ নিয়েছিলেন এই আয়োজনে। চারদিনের এই সম্মেলনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের অমিত সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন আয়োজকরা, তরুণ প্রজন্মকে সামনে রেখে ২০৩৫ সালের রূপরেখা তুলে ধরেন তারা। ফলশ্রুতিতে অধীর আগ্রহ দেখিয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারকও সই হয়েছে সম্মেলনে।

    বিভিন্ন দেশের কয়েক খাতে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি

    বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সফররত দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল। ব্যবসা সম্প্রসারণের কথা জানিয়েছে স্পেনের খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিটেক্স, সিমেন্ট খাতের কোম্পানি লাফার্জহোলসিম ও চীনের অ্যাপারেল কোম্পানি হান্ডা ইন্ডাস্ট্রিজ।

    চীনের খ্যাতনামা পোশাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হান্ডা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বাংলাদেশে ১৫ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে ১০ কোটি ডলার অর্থনৈতিক অঞ্চলের আওতায় টেক্সটাইল ও ডাইং খাতে আর পাঁচ কোটি ডলার রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে গার্মেন্টস শিল্পে বিনিয়োগ করা হবে। এর মাধ্যমে ১৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

  • সিদ্ধিরগঞ্জে চোরাই তেলসহ কৃষকদল নেতাকে আটক করে ছেড়ে দিল পুলিশ

    সিদ্ধিরগঞ্জে চোরাই তেলসহ কৃষকদল নেতাকে আটক করে ছেড়ে দিল পুলিশ

    নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ২০ ড্রাম চোরাই সয়াবিন তেল জব্দ ও কৃষকদলের সাবেক ২ নেতাসহ ৪ জনকে আটক করে পুলিশের উপ-পরিদর্শক সানোয়ার। বুধবার (৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২ টার দিকে আটি ওয়াপদা কলোনি কাঁচপুর ল্যাণ্ডিং স্টেশন সংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় থেকে তাদের আটক করা হয়।

    পরে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে রাত ৩ টার দিকে তাদের ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। পরে স্থানীয়দের তোপের মুখে ৭ ড্রাম জব্দ ও ১ জন লেবারকে আটক  দেখান তিনি।

    জানা গেছে, আটি ছাপাখানা এলাকার নূরা মিয়ার ছেলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কৃষকদলের সাবেক নেতা সেণ্টু মিয়া, তার ভাই বাদশা মিয়া, ইদা মিয়ার ছেলে থানা কৃষকদলের সাবেক সদস্য জাকির ও আটি ফকিরবাড়ী এলাকার দাইমুদ্দিন গাজীর ছেলে মামুন গাজী ট্রলার দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদী দিয়ে ২০ ড্রাম চোরাই সয়াবিন তেল আনে ওয়াপদা কলোনি ল্যাণ্ডিং স্টেশন এলাকায়।

    ট্রলার থেকে ড্রাম নামানোর সময় স্থানীয় বিএনপি নেতা হারুন দেখতে পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদির জি¦লানিকে জানান।

    সাবেক ছাত্রদল নেতা জি¦লানি বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি থানায় টিউটি অফিসারকে ফোন করি। তার কথা মত টহলরত থানার উপ-পরিদর্শক সানোয়ারকে ফোনে জানাই। পুলিশ আসার পর আমিও ছুটে এসে দেখি ৭ টি ড্রাম জব্দ করা হয়েছে। কাউকে আটক করা হয়নি।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় একজন বাসিন্দা জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তেলের ড্রাম জব্দ ও সেণ্টু, জাকির, বাদশা মিয়া ও মামুন গাজীকে আটক করে। পরে তাদের মধ্যে চলে দেনদরবার।

    একপর্যায় আটক ৪ জনকে পুলিশ ছেড়ে দেয়। ছাড়া পাওয়ার পর তারা তেলের ড্রাম সরাতে থাকে। এসময় ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা ও গণমাধ্যমকর্মীরা চলে আসেন। এতে ৭ টি ড্রাম সরাতে পারেনি।

    ছাত্রদল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, রাত ১২ টার দিকে তাদের আটক করে অর্থের বিনিময়ে ৩ টার দিকে তেলসহ চোরদের ছেড়ে দেয় পুলিশ। এসময় আমরা ঘটনাস্থল গিয়ে এসআই সানোয়ারকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, পরিত্যক্ত অবস্থায় ৭টি তেলের ড্রাম জব্দ করা হয়েছে।

    ঘটনাস্থলে উপস্থিত নারায়ণগঞ্জ তুলারাম কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্নসম্পাদক সানি আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি এসে চোরাই তেলের সঙ্গে জড়িত ৫-৬ জনকে দেখেছি। পুলিশের সামনে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ড হয়েছে। তারা তেলের ড্রাম নিয়ে গেছে আর পুলিশ দর্শকের মত দেখছে।

    আসল চোরদের ছেড়ে দিয়ে ১ জন লেবারকে আকট করা চরম বৈষম্য করা হয়েছে।  অন্যরা ছাড়া পাবে ১ জন শাস্তি পাবে এটা হতে পারেনা।

    আটককৃত মামুন গাজী বলেন, তেল কারা কোথায় থেকে এনেছে আমি জানিনা। আমাকে তেলের ড্রাম গুলো রিসিভ করার কথা বলা হয়েছিল। কে বলেছিল জানতে চাইলে তিনি জড়িতদের নাম না বলে শিমরাইল এলাকার দেলু নামে একজনের নাম বলেন।

    কে এই দেলু জানতে চাইলে তিনি তাকে চিনেননা বলে জানান।  সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক সানোয়ার অর্থ লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথমে কাউকে আটক করা হয়নি দাবি করেন। পরে ১ জনকে আকট করা কথা স্বীকার করে।

    আটক ১ জন কোথায় জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, এভাবে আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন না। পরে প্রায় আধা ঘন্টা পর মামুন গাজীকে আটক দেখিয়ে পুলিশের গাড়িতে উঠানো হয়।

    সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহিনূর আলম বলেন, ৭ ড্রাম তেলসহ ১ জনকে আটক করা হয়েছে। তার বেশি কিছু আমার জানা নেই। যদি অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে কিছু আড়াল করা হয়ে তাকে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

  • মিলেছে অনুমোদন, সিঙ্গাপুর থেকে আসবে ৫০ হাজার টন সেদ্ধ চাল

    মিলেছে অনুমোদন, সিঙ্গাপুর থেকে আসবে ৫০ হাজার টন সেদ্ধ চাল

    সিঙ্গাপুরভিত্তিক মেসার্স অ্যাগ্রোক্রপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন বাসমতি সেদ্ধ চাল আমদানি করবে সরকার। প্রতি কেজি চালের দাম পড়বে ৫০ টাকা ৮১ পয়সা।

    খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের খাদ্য চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য এ চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।

    মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এই ৫০ হাজার টন নন বাসমতি সেদ্ধ চাল ক্রয়ে মোট ব্যয় হবে ২৫৪ কোটি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।

    বৈঠক সূত্র জানা গেছে, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার উদ্দেশ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক উৎস থেকে চাল সংগ্রহ করে থাকে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে আন্তর্জাতিক উৎস হতে ৯ লাখ টন চাল আমদানির জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।

    এরইমধ্যে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৪ লাখ ৫০ হাজার টন নন বাসমতি সেদ্ধ চাল এবং জি টু জি পদ্ধতিতে মিয়ানমার থেকে ১ লাখ টন, পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন ও ভিয়েতনাম থেকে ১ লাখ টন আতপ চালসহ মোট ৭ লাখ টন চাল ক্রয়ের চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।

    এছাড়া আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার টন চাল আমদানির লক্ষ্যে চুক্তির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। চুক্তির বিপরীতে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৬ টন এবং জি টু জি ভিত্তিতে ২ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ টন চাল চট্রগ্রাম ও মোংলা বন্দরে পৌঁছেছে।

    এরমধ্যে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ২ লাখ ৪৩ হাজার ১৭৫ টন এবং জি টু জি ভিত্তিতে ২ লাখ ৭ হাজার ৫৩৯ টন চাল সরকারি সংরক্ষণাগারে পাওয়া গেছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এবং জি টু জি পদ্ধতিতে আরও চাল আমদানির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

    সূত্রটি জানিয়েছে, চাল আমদানির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে খাদ্য অধিদপ্তর থেকে চাল ক্রয়ের জন্য গত ১২ মার্চ আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে মোট ১২ সরবরাহকারী দরপত্র দলিল সংগ্রহ করলেও ৫টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়।

    এর মধ্যে সিঙ্গাপুরভিত্তিক মেসার্স অ্যাগ্রোক্রপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড প্রতি টন চালের দাম ৪১৬.৪৪ ডলার উল্লেখ করায় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির নাম সুপারিশ করে, যা উৎস দেশগুলোর গড় দর (৪৪৪.৯১ ডলার) অপেক্ষা ২৮.৪৭ ডলার কম।

    এছাড়া মেসার্স অ্যাগ্রোক্রপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের দেওয়া দর বাংলাদেশের বন্দর পর্যন্ত প্রতি টন ৪১৬.৪৪ ডলার, যা বাজার দর যাচাই কমিটির প্রাক্কলিত দরের চেয়ে কম। এ কারণে এই দর গ্রহণের জন্য দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সুপারিশ করে।

    এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হয়। কমিটির সদস্যরা প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে।

    প্রতি টন ৪১৬.৪৪ ডলার হিসেবে ৫০ হাজার টন নন বাসমতি সেদ্ধ চাল ক্রয়ের জন্য প্রয়োজন হবে ২ কোটি ৮ লাখ ২২ হাজার ডলার। অর্থাৎ গত ২৭ মার্চ তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ডলারের বিনিময় হার প্রতি ডলার ১২২ টাকা (সম্ভাব্য) হিসেবে ২৫৪ কোটি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকার প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে প্রতি কেজির দাম পড়বে ৫০ টাকা ৮১ পয়সা।

    সূত্রটি জানিয়েছে, মেসার্স অ্যাগ্রোক্রপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে চট্রগ্রাম ও মংলা বন্দরের জন্য ৬০:৪০ অনুপাতে কস্ট ইন্সুরেন্স ফ্রেইট-লাইনার আউট (সিআইএফ-এলও) টার্মে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সিডি ভ্যাট ব্যতীত) প্রতি টন ৪১৬.৪৪ ডলার হিসেবে ২ কোটি ৮ লাখ ২২ হাজার ডলারে এই ৫০ হাজার টন (৫%) নন বাস।

  • মাঝরাতে ঘুমন্ত যুবককে ডেকে নিয়ে হত্যা

    মাঝরাতে ঘুমন্ত যুবককে ডেকে নিয়ে হত্যা

    মাঝরাতে ঘুমন্ত যুবককে ডেকে নিয়ে ধারালো লোহার রড দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। বুধবার (২ এপ্রিল) দিবাগত রাতে পূর্বশত্রুতার জেরে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে এ হত্যার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

    নিহত আবু তালেব (৩০) উপজেলার কাশিপুর বেঁদেপল্লী এলাকার মৃত আয়ুব হোসেনের ছেলে। আহত হয়েছেন ছবেদ আলী (৬০) নামে আরেক ব্যক্তি।

    এ ঘটনায় অভিযুক্ত রুবেল হোসেন (৩২) নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত রুবেল হোসেন একই এলাকার মৃত মঙ্গল মিয়ার ছেলে।

    স্থানীয় ও পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে কাশিপুর গ্রামের আবু তালেবের বাড়িতে গিয়ে ডাকাডাকি করেন একই গ্রামের রুবেল হোসেন। এসময় আবু তালেব বাইরে বের হলে লোহার ছুঁচালো অংশ দিয়ে বুকে আঘাত করেন রুবেল। এসময় বাধা দিতে গেলে তালেবের শ্বশুর ছবেদ আলীকেও আঘাত করেন তিনি।

    এক পর্যায়ে চিৎকার শুনে লোকজন এগিয়ে এসে তাদের উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এসময় হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আবু তালেবকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত ছবেদ আলী চিকিৎসাধীন।

    কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম হাওলাদার জানান, লোহার ছুঁচালো অংশ দিয়ে আঘাত করে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত রুবেলকে আটক করেছে পুলিশ। পারিবারিক ঝামেলার কারণে হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।

  • ঈদের আগে বাজার মূলধনে যোগ হলো ২ হাজার কোটি টাকা

    ঈদের আগে বাজার মূলধনে যোগ হলো ২ হাজার কোটি টাকা

    শেয়ার বিক্রির চাপ কমায় ঈদের আগে শেষ তিন কার্যদিবস শেয়ারবাজারে টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার দেখা মিলেছে। এতে গত সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ইউনিটের দাম বেড়েছে। ফলে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ২ হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে সবকটি মূল্যসূচক। তবে কমেছে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ।

    গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৯৩টির স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ১৬১টির। আর ৪২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ লেনদেনে অংশ নেওয়া ৪৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে।

    অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ লাখ ৭১ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ২ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা বা দশমিক ৩৫ শতাংশ।

    বাজার মূলধন বাড়ার পাশাপাশি গত সপ্তাহে মূল্যসূচকও বেড়েছে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে বেড়েছে ১৭ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ২৩ দশমিক ৯১ পয়েন্ট বা দশমিক ৪৬ শতাংশ।

    ইসলামি শরিয়াহভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট বা দশমিক ৮৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৭ দশমিক ২৬ পয়েন্ট বা দশমিক ৬২ শতাংশ।

    আর বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে ২৬ দশমিক ৮১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৪২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১৩ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট বা দশমিক ৭২ শতাংশ।

    সবকটি মূল্যসূচক বাড়লেও ডিএসইতে লেনদেনের গতি কমেছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪০৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৪৭৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৭০ কোটি ৯ লাখ টাকা বা ১৪ দশমিক ৭০ শতাংশ।

    সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ১৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে শাহিনপুকুর সিরামিক।

    এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ২০ বছর মেয়াদি টিবি (ট্রেজারি বন্ড) ০৭৪৪ বন্ড, বিচ হ্যাচারি, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, লাভেলো আইসক্রিম, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, কেডিএস অ্যাক্সেসরিজ এবং বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন।

  • আবারও ভূমিকম্পের শঙ্কা, ৭ মাত্রার হলে ঢাকায় ‘ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি’

    আবারও ভূমিকম্পের শঙ্কা, ৭ মাত্রার হলে ঢাকায় ‘ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি’

    ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় যেভাবে গাজার বহুতল ভবনগুলো মুহূর্তেই মাটির সঙ্গে মিশে যায়, তেমনটিই যেন দেখা গেল থাইল্যান্ডের ব্যাংককে। তবে এটি কোনো হামলা নয়, নয় কোনো বিস্ফোরণের ঘটনাও। শক্তিশালী ভূমিকম্পে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে ব্যাংককের ৩৩ তলা একটি ভবন।

    থাইল্যান্ডের প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ মানুষের শহর ব্যাংকক কাঁপিয়ে দেওয়া এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারের মান্দালয়ে। ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৭ দশমিক ৭। ১১ মিনিটের মাথায় সেখানে ৬ দশমিক ৪ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প হয়।

    উৎপত্তিস্থল অগভীর হওয়ায় কম্পনের তীব্রতা বেশি ছিল। প্রতিবেশী থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, চীন ও ভারতেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

    এ ভূমিকম্পের ধাক্কা বাংলাদেশে অনুভূত হয় শুক্রবার দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে। উৎপত্তিস্থল ৫৯৭ কিলোমিটার দূরে হলেও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে।

    ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বের সিলেট থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকা এবং হিমালয়ের পাদদেশের এলাকাগুলো ভূমিকম্পপ্রবণ। দেখা যাচ্ছে, এসব স্থানে ভূমিকম্প বেড়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশে।

  • সোনার দামে নতুন রেকর্ড, ভরি ১৫৭৮৭২ টাকা

    সোনার দামে নতুন রেকর্ড, ভরি ১৫৭৮৭২ টাকা

    দেশের বাজারে সোনার দাম আবার বাড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনায় এক হাজার ৭৭৩ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৫৭ হাজার ৮৭২ টাকা। দেশের বাজারে সোনার এতো দাম আগে আর কখনো হয়নি।

    স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে দাম বাড়ানো হয়েছে। আগামীকাল শনিবার (২৯ মার্চ) থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

    এতদিন দেশের বাজারে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ লাখ ৫৬ হাজার ৯৯ টাকা। গত ২৫ মার্চ এই দাম নির্ধারণ করা হয়। চার দিনের ব্যবধানে এখন দাম বাড়ানোর কারণে সেই রেকর্ড ভেঙে সোনার দাম নতুন উচ্চতায় উঠলো।

  • মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ধসে পড়েছে সেতু-ভবন, রাস্তায় ফাটল

    মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ধসে পড়েছে সেতু-ভবন, রাস্তায় ফাটল

    মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে শুক্রবার (২৮ মার্চ) দুপুরে আঘাত হেনেছে শক্তিশালী ভূমিকম্প। জার্মানির জিওসায়েন্স ইনস্টিটিউট জিএফজেডের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৭ এবং কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে।

    ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল সাগাইং অঞ্চলে। তবে এর কম্পন মিয়ানমারজুড়ে অনুভূত হওয়ার পাশাপাশি থাইল্যান্ড, চীন ও লাওসেও টের পাওয়া গেছে।

    সেতু ও ভবন ধসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

    প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে মিয়ানমারের সাগাইং সেতু ধসে পড়েছে। এছাড়া মান্দালয়, নেপিদো, পিনমানা, অউংবান ও ইনলে অঞ্চলে বেশ কয়েকটি ভবন ভেঙে পড়েছে।

    ইয়াঙ্গুন-মান্দালয় এক্সপ্রেসওয়ের ওপর অবস্থিত দোথেতাওয়াদি সেতুও ভেঙে গেছে। এছাড়া ৩৬২ মাইল দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ের বেশ কয়েকটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে কিছু রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

    ১২ মিনিট পর দ্বিতীয় ভূমিকম্প

    প্রথম ভূমিকম্পের মাত্র ১২ মিনিট পরই আরেকটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে মিয়ানমারে।

    মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, দ্বিতীয় ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৪, যা প্রথমটির তুলনায় কম। এর কেন্দ্রস্থল ছিল সাগাইংয়ের দক্ষিণে ১৮ কিলোমিটার দূরে।

    তথ্য পাওয়া কঠিন কেন?

    ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমার সামরিক জান্তার শাসনে রয়েছে, যা তথ্য প্রবাহে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। দেশটির সরকার প্রায় সব ধরনের গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে, যার মধ্যে টেলিভিশন, রেডিও, প্রিন্ট ও অনলাইন মাধ্যম অন্তর্ভুক্ত। ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপরও কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে।

    মিয়ানমারে ভূমিকম্প

    মিয়ানমারে তুলনামূলকভাবে ভূমিকম্পের ঘটনা বেশি ঘটে, বিশেষ করে থাইল্যান্ডের তুলনায়। ১৯৩০ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে সাগাইং ফল্ট লাইনের আশপাশে ৭ মাত্রার ছয়টি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল।

    থাইল্যান্ড ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকা নয় এবং সেখানে যেসব ভূমিকম্প অনুভূত হয়, তার বেশিরভাগই মিয়ানমার থেকে ছড়িয়ে পড়ে।

    বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংককের ভবনগুলো সাধারণত শক্তিশালী ভূমিকম্প সহ্য করার জন্য তৈরি নয়, তাই এই ভূমিকম্পের ফলে সেখানে কাঠামোগত ক্ষতি মারাত্মক হতে পারে।

  • চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও গভীর হবে

    চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও গভীর হবে

    চীন ও বাংলাদেশ তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বেইজিং জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ণ সমর্থন দেবে।

    দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে উভয় দেশ বিনিয়োগ, বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ও জনগণের পারস্পরিক বিনিময় বাড়ানোর ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।

    বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) চীনের নির্বাহী উপ-প্রধানমন্ত্রী ডিং শুয়েশিয়াং বোআও ফোরাম ফর এশিয়া বার্ষিক সম্মেলনের সাইডলাইনে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে নেতৃত্ব দেন।

    উপ-প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং আপনার সফরকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছেন। চীন আশা করে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আরও সমৃদ্ধ হবে।

    বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা দেশের ‘এক-চীন নীতির প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি’ পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বলেন, বাংলাদেশ গর্বিত যে এটি দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (বিআরআই) যোগ দিয়েছে।

    বাংলাদেশ উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণমূলক প্রকল্পে চীনের সহায়তা চায় এবং চীনের দেওয়া ঋণের সুদের হার ৩ শতাংশ থেকে ১ থেকে ২ শতাংশ-এ কমানোর অনুরোধ জানায়। পাশাপাশি, বাংলাদেশ চীনা অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোর জন্য প্রতিশ্রুতি ফি মওকুফের আহ্বান জানায়।

    প্রধান উপদেষ্টা চীনা প্রস্তুতকারকদের বাংলাদেশে শিল্প স্থানান্তর সহজ করার জন্য বেইজিংয়ের সহায়তা চান, বিশেষ করে রেডিমেড পোশাক, ইলেকট্রিক যানবাহন, লাইট মেশিনারি, হাই-টেক ইলেকট্রনিক্স, চিপ উৎপাদন ও সৌর প্যানেল শিল্পে।

    উপ-প্রধানমন্ত্রী ডিং শুয়েশিয়াং জানান, চীন ২০২৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশি পণ্যের জন্য শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা দেবে – যা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান পাওয়ার দুই বছর পর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনার বিষয়েও আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।

    চীনের নির্বাহী উপ-প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, মোংলা বন্দর আধুনিকায়ন ও দাশেরকান্দি পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পে চীন অর্থায়ন করবে।

     

    তিনি বলেন, চীন গত বছর বাংলাদেশ থেকে আম আমদানির জন্য একটি প্রটোকল স্বাক্ষর করেছে। চীনা কর্মকর্তারা জানান, এই গ্রীষ্মেই বাংলাদেশ থেকে চীনে আম রপ্তানি শুরু হবে। এছাড়া, কাঁঠাল, পেয়ারাসহ বিভিন্ন জলজ পণ্য আমদানিরও পরিকল্পনা রয়েছে চীনের, যা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্য আনতে সহায়ক হবে।

    চীনা উপ-প্রধানমন্ত্রী জানান, চীন সরকার ও তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আরও বেশি শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করবে। বর্তমানে কয়েক হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনে অধ্যয়ন করছে।

    চীন বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জন্য চারটি মহাসাগরগামী জাহাজ ক্রয়ে অর্থায়ন করবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

    এছাড়া, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সংলাপকে উৎসাহিত করতে চীন সহযোগিতা করবে বলে জানান তিনি।

    প্রধান উপদেষ্টা চীনের এই সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘আজকের বৈঠক বাংলাদেশ-চীন অংশীদারত্বকে আরও গভীর করার আরেকটি মাইলফলক।’

    তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা একসঙ্গে কাজ করি—বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও অংশীদারত্বের এক নতুন যুগের সূচনা করি এবং আমাদের কৌশলগত সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করি।’

    বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি, রেল ও সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা ফওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান এবং বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।