পানি কমায় বাড়ছে তিস্তার ক্ষত

কমতে শুরু করেছে তিস্তা নদীর পানি। পানি কমলেও লালমনিরহাটে দেখা দিয়েছে ভাঙন। কয়েকদিন আগেও টলটলে পানির স্রোতে দ্বীপের মতো ভেসে থাকা গ্রামগুলোতে এখন চোখে পড়ছে ভাঙা ঘর, ভেজা আসবাবপত্র আর কাদায় মাখামাখি উঠান। তীরবর্তী মানুষের মুখে একটাই দীর্ঘশ্বাস, ‘সব হারিয়েও এখন ভাঙনের ভয়’। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় প্রতিদিনই নতুন এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।
হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট আর আবাদি জমি হুমকির মুখে। দক্ষিণ ভোটমারী ও সিন্দুর্না, মহিষখোচার চরাঞ্চলে প্রতিদিন গড়ে কয়েক হাত জমি নদীতে চলে যাচ্ছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ফসলি জমিতে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ক্ষতি।
গড্ডিমারীর কৃষক নুরুজ্জামান বলেন, তিন বিঘা জমিতে দুই দফায় ধান লাগিয়েছিলাম। বন্যার পানিতে সব শেষ। নতুন করে চারা কেনার মতো টাকাও নেই।
সিন্দুর্না গ্রামের সফুরা বেগম ভেজা খাটের পাশে বসে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, তিস্তা আমাদের সব শেষ করে দিলো। ক্ষেত গেল, ঘর গেল, মাছ গেল। ত্রাণ দিয়ে তো একদিন চলে, আমাদের চাই স্থায়ী বাঁধ।
সিন্দুর্না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টেবিল-চেয়ার ভিজে কাঠ আলগা হয়ে গেছে। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, পাঠদান শুরু হলেও শিশুরা ঠিকমতো বসতে পারছে না। বিদ্যালয় ভবনের গা ঘেঁষে ভাঙন শুরু হয়েছে, যে কোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কা।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সাইখুল আরিফিন দাবি করেন, ক্ষতির পরিমাণ সীমিত। তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ কৃষকের কাছে রোপণের জন্য চারা নেই, নতুন করে কেনার সামর্থ্যও নেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন বেড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।তিস্তা শুধু ঘরবাড়ি ও ফসল ভাসায়নি, মানুষের মনে রেখে গেছে গভীর ক্ষতের দাগ। তীরবর্তী মানুষের মুখে একটাই দাবি- ত্রাণ নয়, চাই তিস্তা মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন।