# দুই দফা শোকজ
# কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ #অর্থপাচার ও মানবপাচারের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
এয়ার টিকিট সিন্ডিকেটের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচিত শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার সবুজ মুন্সীকে খুঁজছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। রাজধানী ঢাকা থেকে পরিচালিত ‘নড়িয়া ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস’ নামের একটি ট্রাভেল এজেন্সির মালিক এই সবুজ মুন্সীর বিরুদ্ধে রয়েছে টিকিট মজুত, অতিরিক্ত দামে বিক্রি, অবৈধ সম্পদ অর্জন, অর্থপাচার এবং মানবপাচারের মতো একাধিক গুরুতর অভিযোগ। এসব বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে গ্রুপ বুকিংয়ের নামে টিকিট মজুত ও উচ্চ দামে বিক্রির অভিযোগে সবুজ মুন্সীকে দুই দফায় কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়। প্রথম নোটিশটি ইস্যু হয় ২০২৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এবং দ্বিতীয়টি ২ জুন।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ‘নড়িয়া ট্রাভেলস’ যাত্রীদের নাম, পাসপোর্ট নম্বর এবং অনুলিপি ছাড়াই গ্রুপ বুকিংয়ের মাধ্যমে টিকিট বুক করে তা অস্বাভাবিক দামে বিক্রি করছে—যা সরকারি বিধিনিষেধের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তদন্ত কমিটি এসব অভিযোগের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেয়েছে বলেও নোটিশে জানানো হয়।
এতে আরও বলা হয়, কেন ‘নড়িয়া ট্রাভেলস’-এর লাইসেন্স বাতিল এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে বিষয়ে সবুজ মুন্সীকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
তার বিরুদ্ধে প্রকাশিত বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, দুদকে জমা দেওয়া একটি লিখিত অভিযোগে বলা হয়—
“শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার উপসী গ্রামের সামসুল হক মুন্সীর ছেলে সবুজ মুন্সী ১০ কোটি টাকা খরচ করে দুটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন। ঢাকার নয়াপল্টনের ৬৬, ভিআইপি রোডের স্কাইভিউ ট্রেড ভ্যালির ১৪ তলায় বিলাসবহুল ৫০০০ স্কয়ারফুট অফিস স্পেস রয়েছে তার। শুধু এই অফিসের ডেকোরেশনেই ব্যয় হয়েছে ৫ কোটি টাকার বেশি। বসুন্ধরা রিভারভিউতে রয়েছে তার সাততলা আলিশান বাড়ি। এছাড়াও তার নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের তথ্য রয়েছে।
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগিতায় টিকিট সিন্ডিকেট এবং দুবাই ভিজিট ভিসায় মানবপাচার করে তিনি হঠাৎ বিপুল টাকার মালিক হন। সবুজ মুন্সী আওয়ামী যুবলীগের শরীয়তপুর জেলা কমিটির দপ্তর সহ-সম্পাদক পদে রয়েছেন।”
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির নাম ব্যবহার করে ভুয়া টিকিট বিক্রি, রিফান্ডের টাকা আত্মসাৎ এবং বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে মধ্যপ্রাচ্যগামী রুটে টিকিটের দাম এক লাখ ৯০ হাজার টাকায় পৌঁছে যায়। সরকার হস্তক্ষেপ করে কঠোর নির্দেশনা জারি করলে বর্তমানে সেই ভাড়া নেমে আসে ৩০-৩৫ হাজার টাকায়। ১১ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনায় বলা হয়, টিকিট বুকিংয়ের সময় যাত্রীর নাম, পাসপোর্টের তথ্য ও অনুলিপি জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
কিন্তু সবুজ মুন্সীর ‘নড়িয়া ট্রাভেলস’ এ নিয়ম উপেক্ষা করে নামবিহীন গ্রুপ বুকিংয়ের মাধ্যমে টিকিট মজুত করে উচ্চ দামে বিক্রি করে চলেছে বলে তদন্তে প্রমাণ মিলেছে।
এ বিষয়ে জানতে সবুজ মুন্সীর ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।