নিজস্ব সংবাদদাতা।নারায়ণগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও হাইওয়ে পুলিশের চোখের সামনে দিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তিন চাকার অবৈধ যানবাহন। লাইনম্যান হারুন ও জসিমের নেতৃত্বে একটি সিণ্ডিকেট হাইওয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে মাসোহারা বাণিজ্যের মাধ্যমে মহাসড়কে সিএনজি চালিয়ে আসছে বলে জানা যায়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড মোড়, সানারপাড় স্ট্যান্ডের উত্তর ও দক্ষিন পাশে, মৌচাক স্ট্যান্ডের দক্ষিন পাশে, চিটাগাং রোড স্ট্যান্ডের উত্তর পাশে ডেমরা সড়কের প্রবেশ মূখে এ রহমান সুপার মার্কেটের সামনে, আদমজী সড়কের প্রবেশ মূখে পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে দুইটি স্ট্যান্ডে এবং সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর স্ট্যান্ডের সাগর ফিলিং ষ্টেশনের সামনে, মদনপুর স্ট্যান্ডের এশিয়ান হাইওয়ের প্রবেশমূখ, পশ্চিম পাশে ঢাকাগামী লেনের মুখে, কেওঢালা স্ট্যান্ড, মোগড়াপাড়া স্ট্যান্ডের পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে এবং মেঘনা ঘাট এলাকা এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর স্ট্যান্ডের সিলেটগামী সড়কের প্রবেশমূখ, রূপগঞ্জের তারাব বিশ্বরোড, রূপসী স্ট্যান্ড, বরপা স্ট্যান্ড ও ভুলতা গাউছিয়া মোড়ের উত্তর ও দক্ষিন পাড়ে রয়েছে সিএনজির অবৈধ স্ট্যান্ড। এসব স্ট্যান্ডগুলো পরিচালিত হয় হাইওয়ে পুলিশের মনোনীত লাইনম্যান দ্বারা। এসব স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন চলাচল করছে ১৪/১৫ শ সিএনজি চালিত অটোরিকশা। আর এসব সিএনজি স্ট্যান্ডগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে একটি লাইনম্যান সিণ্ডিকেট।

এই সিন্ডিকেটের মূলহোতা হচ্ছে কাঁচপুর এলাকার হারুন ও জসিম। এই লাইনম্যান সিণ্ডিকেট প্রতি সিএনজি থেকে প্রতিমাসে ১ হাজার টাকা করে মাসোহারা আদায় করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
প্রশাসন সূত্র জানায়, ২০১৫ সাল থেকে দেশের ২২টি মহাসড়কে থ্রি হুইলার (তিন চাকার যান) চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। এরপর, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের সব প্রধান মহাসড়কে এ ধরনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়ে সেই নির্দেশকে আরও জোরদার করেন হাইকোর্ট। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অন্যতম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক বলেন, মহাসড়কে তিন চাকার অবৈধ যানবাহনের কোনো অনুমতি নেই আমি জানি। কিন্তু জীবিকার তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কে যাই। এ ছাড়া আমরা একাধিক লাইনম্যান জসিমকে মাসোহারা দিয়ে গাড়ি চালাই। তা না হলে কি মহাসড়কে গাড়ি চালানো যায় ।
এদিকে হাইওয়ে পুলিশ বলছে, নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে নিষিদ্ধ তিন চাকার যানের বিরুদ্ধে মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
লাইনম্যান হারুন ও জসিম জানান, আমরা পুলিশকে ম্যানেজ করেই লাইন চালাই। আর এ কাজ শুধু আমিই করি না, আরো অনেকেই এর সাথে জড়িত। তদন্ত করে দেখেন।
হাইওয়ে পুলিশ, শিমরাইল ক্যাম্পের ইনচার্জ (টিআই) জুলহাস বলেন, থ্রিহুইলারের বিষয়টি নিয়ে আমরা তৎপর রয়েছি। পুলিশের সাথে যোগসাজশের বিষয়টি মিথ্যা। প্রতিনিয়ত তিন চাকার যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে থ্রি হুইলার চলাচলের বিষয়ে জানতে চাইলে কাচঁপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, আমরা মহাসড়কে সিএনজি নিয়ন্ত্রণে মাইকিংসহ জনসচেতনার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করছি। জনবল কম নিয়েও আমরা প্রতিদিন অভিযান করে গাড়ী ধরে মামলা দিচ্ছি। তারপরেও তারা আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে মহাসড়কে চলাচল করে। একটি অসাধু চাঁদাবাজ চক্র রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বারিক বলেন, মহাসড়কে চলাচলরত সিএনজি থেকে যদি কেউ চাঁদাবাজি করে ওই বিষয়টি হাইওয়ে পুলিশ দেখবে। তারপরও যদি কেউ লিখিত অভিযোগ করে ওই অভিযোগ প্রেক্ষিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
র্যাব-১১’র অধিনায়ক লে. কর্ণেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং যেকোন ধরণের অপরাধ কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণে র্যাব তৎপর রয়েছে। হারুন ও জসিমের বিষয়ে আমাদের গোয়েন্দা কাজ করছে।



















