সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি :
সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন মিজমিজি দক্ষিণপাড়া আজগর আলী ওয়াকফ স্টেট নামে ১৯৯৬ সনে ৫.৬২ একর সম্পত্তি তালিকাভুক্ত হলে তা হতে গত ২২/০৩/২০০০ ইং তারিখে ওয়াকফ প্রশাসকের আদেশে ২.৭৭ একর সম্পত্তি ওয়াক্ফ অধ্যাদেশ ১৯৬২ এর ৫০ ধারার বিধানমতে ওয়াকফ সম্পত্তি হতে অবমুক্ত করা হয়। উক্ত ওয়াকফ সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওয়াকফ প্রশাসন কর্তৃক ০২ জন মোতওয়াল্লি নিয়োগ করা হয়। মোতওয়াল্লি নিয়ে বিতর্ক থাকায় ওয়াকিফের ওয়ারিশগণ মোতওয়াল্লি নিয়োগ অবৈধ দাবি করে নারায়ণগঞ্জ জজ কোর্টে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে চলমান আছে পাশাপাশি একজন মোতওয়াল্লি ও মোতওয়াল্লি নিয়ে দায়ের করা মামলার বাদীও ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং একজন মোতওয়াল্লি জীবিত থাকলেও তিনি শয্যাশায়ী।
এমতাবস্থায় স্থানীয় ভূমি দস্যু ও সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত মিজমিজি দক্ষিণপাড়ার কাজেম আলীর ভূইয়ার পুত্র আমিনুল হক রাজু ও তার দলবলসহ উক্ত স্টেটের অবমুক্ত করা ২.৭৭ একর সম্পত্তিসহ ওয়াকফকৃত ২.৮৫ একর সম্পত্তিতে ওয়াকফ প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে একাধিক সাইনবোর্ড স্থাপন করে এবং একটি জায়গায় বালু ভরাট শুরু করে।
এ বিষয়ে ওয়াকিফের ওয়ারিশ বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসনের শরণাপন্ন হলে ওয়াক্ফ প্রশাসক জানান, ওয়াকফকৃত কোন সম্পত্তিতে প্রশাসকের অনুমতি ব্যতীত কেউই কোন সাইনবোর্ড স্থাপন, সম্পত্তির পরিবর্তন-পরিবর্ধন করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তিনি এও জানান, সিদ্ধিরগঞ্জ মিজমিজি হাজী আজগর আলী ওয়াকফ স্টেটের সম্পত্তিতে তিনি সাইনবোর্ড লাগাতে কাউকে অনুমতি দেননি। অনুমতি নিয়ে একমাত্র মোতওয়াল্লি অথবা ওয়াকিফের ওয়ারিশগণ ব্যতীত অন্যকেহ এই সম্পত্তিতে কোনকিছু করলে তা ওয়াকফ কর্তৃপক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪/১২/২০২১ ইং তারিখে ওয়াকিফের ওয়ারিশ আব্দুল মতিন অবৈধ সাইনবোর্ড স্থাপনের তদন্ত চেয়ে প্রশাসক বরাবর আমিনুল হক রাজুর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২১/০১/২০২১ ইং তারিখে ওয়াকফ পরিদর্শক মোঃ রেজাউল করিম সরকার সরেজমিনে উক্ত বিষয়টি তদন্তে আসেন।
তদন্ত শেষে তিনি সংবাদকর্মীদের তাৎক্ষণিক জানান, আমি আব্দুল মতিনের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। নিজের চোখে অবৈধ সাইনবোর্ডও দেখেছি। আমরা কাউকে সাইনবোর্ড লাগাতে অনুমতি দেইনি। আমি খুব শীঘ্রই আমার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। তারপর কর্তৃপক্ষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
তদন্ত কর্মকর্তার এ বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তার বক্তব্যে আমিনুল হক রাজু গংরা বিচলিত হয়ে নিজেদেরকে আইনের শাস্তি থেকে বাচাতে বিভিন্ন মহলে দৌড়-ঝাপ শুরু করেছে। পাশাপাশি তদন্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম সরকারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়।
রাজু ও তার বাহিনী তদন্ত কর্মকর্তাকে বুঝাতে চেষ্টা করে যে তারা উক্ত সাইনবোর্ড লাগায়নি। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তার তদন্তস্থলের ২০০ গজ সামনেই আওয়ামী লীগ নেতা হাজী ইয়াসিন ও রাজুকে ওয়াকফ সম্পত্তি উদ্ধারে ভূমিকা রাখার অভিনন্দন জানিয়ে লেখা ব্যানার দেখা যায়। তাতে প্রমাণ হয় যে সাইনবোর্ড চক্রের হোতা রাজু।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, ১৯৮৮ সন থেকেই আমিনুল হক রাজু সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় নানা অপকর্ম করে আসছে। সে হত্যা, চাঁদাবাজীসহ বহু মামলার আসামী হয়ে ১৯৮৮সনে প্রথমে সে সন্ত্রাসী মামলার আসামী হয়। ১৯৯৮ সনে সার্ভেয়ার রফকে কুপিয়ে পঙ্গু করে। ১৯৯৬ সনে সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামী লীগ অফিসে মতিন হত্যা মামলারও আসামী ছিল। দেশব্যাপী আলোচিত সাত খুন মামলায় এজাহারভুক্ত আসামী হয়েও অলৌকিকভাবে চার্জশীট থেকে তার নামটি বাদ পড়ে। সম্প্রতি চিটাগাং রোড মাইক্রো স্ট্যান্ডের একটি চাঁদাবাজী মামলারও সে আসামী। তার এলাকায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের এক ঠিকাদারের চাঁদাবাজী মামলারও সে আসামী। এলাকায় রয়েছে তার বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। তার বাহিনীর ভয়ে মিজমিজি দক্ষিণপাড়া এলাকার লোকজন সর্বদা থাকে আতঙ্কিত। এলাকাবাসী এই চক্রের হাত থেকে ওয়াক্ফকৃত ২.৮৫ একর সম্পত্তিসহ ব্যক্তিমালিকানা ২.৭৭ একর মোট ৫.৬২ একর সম্পত্তিতে অবৈধভাবে সাইনবোর্ড লাগানোর জন্য শাস্তি দাবি করেন।
Leave a Reply