আলোরধারা ডেস্ক :
ইদানিং প্রায়সই শোনা যাচ্ছে কিশোর অপরাধের নানান ঘটনা। কি কারণে দিন দিন কিশোর গ্যাং তৈরি হচ্ছে আর কেনই বা সংঘবদ্ধ কিশোর’রা বিভিন্ন অপরাধ মূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে তা নিয়ে সমাজ বিজ্ঞানীরাও আজ চিন্তিত। কিশোররা আজ কেবল হাতাহাতিতেই সীমাবদ্ধ নয় তারা এখন পরিকল্পিত হত্যার সাথেও জড়িয়ে পড়ছে। অপরাধমূলক কাজে এদের উৎসাহিত করছে কারা আর কেনই বা অপরাধমূলক কাজ থেকে কিশোরদের ফেরানো যাচ্ছে না? কীভাবে কিশোররা পরিবার-সমাজ ও আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দিন দিন ভয়ংকর রূপে আবির্ভূত হচ্ছে। এর জন্য দায়ী কে? সমাজ, পরিবার না কি আইনি দূর্বলতা। এই সব প্রশ্নই এখন ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে মানুষের মুখে মুখে।
প্রতিটি পরিবারের স্বপ্ন থাকে সন্তানকে নিয়ে গর্ব করার, প্রত্যাশা থাকে সন্তানটি একদিন বংশের নাম উজ্জ্বল করবে। সামাজের অপরাপর অংশের মানুষের আঙ্খাক্ষা থাকে ছেলেটি সমাজের জন্য কাজ করে এলাকার সুনাম বয়ে আনবে। আর এ ধরণের প্রত্যাশা নিয়েই পরষ্পর সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে তার উল্টো। সন্তানের অপরাধের কারণে বহু পিতাকে মাথা নিচু করে চলতে হচ্ছে। আর তারকা চিহ্নিত কুখ্যাত অপরাধী হলে শুধু ঐ কিশোরের পিতা নয় গোটা গ্রামবাসীকেই মাথা নিচু করে চলতে হয়।
আমাদের সকলেরই উচিৎ কিশোর যুবকদেরকে খারাপ কাজ থেকে নিরুসাহিত করে ভাল কাজের দিকে ফিরিয়ে। তাদেরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার দ্বায়িত্ব একক ভাবে পরিবার কিংবা প্রশাসনের নয়, বরং আমরা নৈতিক দ্বয়িত্ব হিসাবে যদি প্রত্যেকেই এগিয়ে আসি তাহলেই ওদেরকে ভাল পথে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ সন্তানদের আচরণ ও গতি প্রকৃতির দিকে নজর দেয়া। সেই সাথে ওদের বন্ধু কারা তা চিহ্নিত করা। ওদের অর্থনৈতিক আয়ের উৎস কী? ওদের পিছনে কারা সাহস যোগাচ্ছে কারা ওদের নিয়ন্ত্রণ করছে?
সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে লেখাপড়ার প্রতি নিরুসাহিত হওয়া, কাজে কর্মে অনীহা, সময় অসময়ে বাহিরে যাওয়া, এমন কী রাতে বাড়ি না ফেরা, বৈরী আচরণ, স্নেহ ও সম্মান সূচক আচরণ না করা, উগ্র মেজাজ এসবই বকে যাওয়া একজন কিশোর বা যুবকের লক্ষণ বলে ধরে নেয়া যায়। হয়তো এই দিকগুলো যদি আমরা পরখ করতে পারি তাহলেই অতি সহজে বুঝতে পারবো আমাদের সন্তান অপরাধের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে কিনা। আর এই প্রাথমিক কালেই যদি তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়া যায় তবেই তাকে সেই অপরাধের পথ থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে; নয়তো সারা জীবনই পস্তাতে হয়।
কখনো কখনো এমনও তথ্য পাওয়া যায় যে, সুবিধাবাদী কিছু কিছু নেতা নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য কিশোরদেরকে অপরাধ মূলক কাজে ব্যবহার করে থাকে। অধিক মুনাফা লোভী ঐসব অপরাধী ব্যাক্তি কিশোরদের দিয়ে বিভিন্ন ভাবে সুকৌশলে মাদক বিক্রির কাজে নিয়োজিত করছে। সেই সাথে তাদের দিয়ে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জবরদখলসহ হত্যার মতো ঘৃণীত অপরাধমূলক কাজও করিয়ে নিচ্ছে।
এতদিন রাস্তার মোড়ে, অলিতে-গলিতে কিংবা পরিত্যাক্ত কোন ভবনে তাদের বিচরণ লক্ষ্য করা গেলেও সম্প্রতি নবরূপে কিশোররা বেপরোয়া স্টাইলে মটর সাইকেল, গাড়ি কিংবা বাইসাইকেলে দশ থেকে ত্রিশ জনের মতো দল করে দিনে কিংবা রাতে উচ্চ হর্ণ বাজিয়ে চলাফেরা করে থাকে। তাদের মধ্যে অনেকেই অপ্রাপ্ত বয়স্ক এমন কী ড্রাইভিং লাইন্সহীন। ওরা কী ভাবে প্রশাসনের চোখের সামনে এমন বেপরোয়া ভাবে চলাচল করছে? কিশোরদের এ ধরণের সংঘবদ্ধ আড্ডা ও অপরাধ মূলক কাজের প্রতি নজর দেয়া গোয়েন্দা সংস্থার যেমন দায়িত্ব তেমনি সমাজের জনপ্রতিনিধিদেরও সামাজিক শান্তি শৃঙ্খলার জন্য বিশেষ ভূমিকা নেয়ার দরকার। কিন্তু বাস্তবে এ বিষয়ে তাদের রয়েছে বিস্তর উদাসীনতা। একজন অপরাধি আইনের ফাকফোকর দিয়ে কৌশলে জামিনে বেড়িয়ে এসে আবারও অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে।
কিন্তু সেই অপরাধীর প্রতি যদি পুলিশ প্রশাসনের নজরদারি থাকতো। তাহলে সে হয়তো বেরিয়ে এলেও অপরাধের সাথে আর জড়িত হবার চিন্তাই করতো না। পারিবারিকভাবে যদি সন্তানের অপরাধ মূলক কাজে জড়িত হবার কথা শুনে প্রথমিক পর্যায়েই বাধা প্রয়োগ করতো তাহলে হয়তো কিশোর অপরাধের প্রবণতা সমাজ থেকে কমে যেত।
অভিজ্ঞ মহলের কেউ কেউ কিশোর অপরাধের সংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারন বলে মনে করেন সামাজিক দূর্বলতাকে, তাদের মতে সমাজিক বিচার ব্যবস্থা আজ অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। আর তাই অপরাধীদের প্রতিরোধ করা থেকে অনেকে আজ
অপরাধীদের ভয়ে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। সামাজিক ভাবে একজন অপরাধী হলেও আইনের চোখে সাক্ষী-প্রমাণ না দিতে পারায় অপরাধী ব্যাক্তিটি হয়ে উঠে শক্তিধর।
তাই আমাদের সমাজ ব্যবস্থা, রাষ্ট্রিয় আইন ও পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ সময় উপযোগী করতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রতিবাদ করতে হবে।মানবিক দায়বদ্ধতা থেকেই সামাজিক অবক্ষয় দুর করতে হবে। সমাজ সুন্দর-সুশৃংখল হলে কোন সন্তান অপরাধী না হয়ে হবে সমাজ ও রাষ্ট্রের গর্বিত সন্তান।
Leave a Reply