সোস্যাল মিডিয়ায় অপরাধ প্রবণতা
সোস্যাল মিডিয়া এখন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র আজ ইন্টারনেটের মায়াবী জাল বিস্তৃত। সহজলভ্য ইন্টারনেটের কল্যাণে ফেসবুক,হোয়াইটস অ্যাপ,ইন্সটাগ্রাম,টুইটার সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আজ সবার হাতের মুঠোয়! চার দেয়ালের বন্দী জীবনে সোস্যাল মিডিয়া আজ জীবন যাত্রায় এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন আরো বেশি উন্মুক্ত ও বিস্তৃত।বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ফেসবুক। ফেসবুকের কল্যাণে শিক্ষা, রূপচর্চা,আইন,সাস্থ্যবিধির নানাবিধ পরামর্শ গ্রহণ থেকে শুরু করে ব্যবসা বাণিজ্য পর্যন্ত আজ পরিচালিত হচ্ছে ফেসবুকে। ফেসবুক ভিত্তিক এই ধরনের উদ্যোগ এখন আরো বেশি জনপ্রিয়। কিন্তু বহুমাত্রিক সোশ্যাল সাইট ফেসবুক নিয়ে অনেকেই অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।বিশ্বায়নের এই যুগে সোস্যাল মিডিয়ার কল্যাণে জীবন ধারণে বৈচিত্র্য যেমন বেড়েছে, তেমনি সম্মুখীন হচ্ছেন নানাবিধ সমস্যার। ভাবা যায় আপনার আইডির ব্যক্তিগত তথ্য,ছবি ও ভিডিও একদল সন্ত্রাসীর কাছে শক্তিশালী অস্ত্র ! এদের কাজ হলো আইডি হ্যাক করে ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে ব্ল্যাকমেইল করা। ছদ্ম নাম ব্যবহার করে স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ হাতিয়ে নেয়া।
অসতর্কতা,অসেচতনতা ও দুর্বল পাসওয়ার্ডের কারণে প্রতিনিয়ত হ্যাক হচ্ছে আমাদের কারো না কারো ফেইসবুক আইডি। সাইবার অপরাধীরা শুধু আইডি হ্যাক করেই ক্ষ্যান্ত হচ্ছেনা, নিয়ে নিচ্ছে আইডির স্পর্শকাতর সব তথ্য,ছবি ও ভিডিও। আইডি হ্যাক করে বিকাশ বা অন্য মাধ্যমে টাকা দাবি করা, একান্ত ব্যক্তিগত ছবি ছড়িয়ে দেবার হুমকি দেয়া এবং মিথ্যা অসত্য তথ্য প্রচার করে সামাজিকভাবে হেয় করার মত ঘটনাগুলো এখন সবচেয়ে বেশি ঘটছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ ধরনের ঘটনায় ভিকটিম হচ্ছে তরুণীরা। এছাড়াও বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে আইডি হ্যাকিং হচ্ছে কিছুটা ফিশিং সাইট ব্যবহার করে এবং ইয়াহু, আউটলুক ক্লোন করে, বেশ কিছু পাবলিক ফিগারের আইডি হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে ফেসবুকের নির্দিষ্ট রুলস মেনেই!
তরুণীদের আইডির পাশাপাশি ব্যবসায়ী, গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং সেলেব্রিটিদের আইডিগুলো হ্যাকের দিকে সাইবার ক্রিমিনালদের লক্ষ্য থাকে। হ্যাকিংয়ের শিকার আইডিগুলো অনেক সময়েই রিকভারি করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে আইডি থেকে প্রাপ্ত পার্সোনাল তথ্য ও ছবির মাধ্যমেই ঘটে বিপত্তি। ফলে হ্যাকিংয়ের শিকার ব্যক্তি সামাজিক ও আর্থিক ভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়ে থাকেন।
যাদের আইডি হ্যাক হয় সেসব আইডি কিছুক্ষেত্রে রিকভারি করা যায়। তবে যে আইডি রিকভারি করা সম্ভব হয় না সেই আইডিগুলো থানায় জিডির ওপর ভিত্তি করে ফেসবুক থেকে নিষ্ক্রিয় করার সুযোগ আছে। তাই হ্যাক হওয়া আইডির মালিকের দ্রুত সময়ের মধ্যে নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি করে রাখা জরুরী ।
তাই যে কোন ধরনের ব্ল্যাকমেইল বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। প্রথমেই নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিতে হবে।পুলিশের সাইবার ক্রাইম ডিভিশন,সিআইডি কিংবা বিটিআরসি তে অভিযোগ করতে পারেন।অনেকেই পরিবার,সমাজের ভয়ে আইনের আশ্রয় নিতে চান না,পরবর্তীতে এরা আরো জটিল সমস্যায় পড়েন! আপনি চাইলে আইনজীবীর মাধ্যমে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারেন। সোস্যাল মিডিয়ায় নিরাপদ থাকতে আপনার সচেতনতা ও সোস্যাল সাইট ব্যবহারে দক্ষতা থাকা জরুরী।আপনার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় গুলো সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার ক্ষেত্রে আপনাকে বিচক্ষণ হতে হবে। তবেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
মোঃ রাশেদুল হক
অ্যাডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
Leave a Reply