স্টাফ রিপোর্টার:
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার মিজমিজিতে বাক প্রতিবন্ধী সিরাজুল ইসলামকে পিটিয়ে হত্যা মামলার ১০ আসামীর জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোঃ আনিসুর রহমানের আদালতে ওই ১০ আসামী উপস্থিত হয়ে জামিন প্রার্থণা করলে শুনানী শেষে আদালত তাদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এই ১০ আসামীর সবাই উচ্চ আদালতে আগাম জামিনের আবেদন করলে তাদের ১০ দিনের মধ্যে নিম্ন আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে তারা মঙ্গলবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন প্রার্থণা করেন।
যে ১০ আসামীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে তারা হলো, মাদক ব্যবসায়ি হিসেবে পরিচিত টাইগার ফারুক, আদমজী জুট মিলের লোহা চোর মোটা কবির, মজিবর, বাদল মিয়া, মাঈন উদ্দিন, মোঃ রাসেল, মোঃ ফারুক মুন্সী, শাজাহান ওরফে বালু শাজাহান, মোঃ নজরুল ইসলাম ও শাহজালাল।
আসামীপক্ষের আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল বলেন, এ মামলায় ৭৫ আসামীর মধ্যে ১০ আসামী উচ্চ অদালতে আগাম জামিনের জন্য গেলে উচ্চ আদালত তাদের ১০ দিনের মধ্যে নিম্ন আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদাণ করেন। ওই নির্দেশ অনুযায়ী আসামীরা মঙ্গলবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন প্রার্থণা করলে বিচারক তাদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে আদালত প্রাঙ্গনে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা আসামীদের ছবি তুলতে গেলে টাইগার ফারুক ও মোটা কবিরের ক্যাডার বাহিনীরা সাংবাদিকদের বাধা দেয়। এবং ক্যামেরা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে মারমুখি হয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সন্ত্রাসীরা ঘিরে রাখে। ব্যাপক হৈ চৈ ও বাকতিন্ডার মধ্যে সাংবাদিকদের কয়েকজন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েলকে বিষয়টি অবহিত করেন। পরে জুয়েল ঘটনাস্থলে ছুটে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন এবং কবির ও ফারুকের লোকজনকে বকাঝকা করে সরিয়ে দেন। এবং সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার জন্য দু:খ প্রকাশ করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আদালতে আত্মসমপর্ণ করার আগেই সকালে মাদক ব্যবসায়ি টাইগার ফারুক ও মোটা কবির বাহিনীর ক্যাডাররা আদালত প্রাঙ্গনে জড়ো হয়। এবং জামিন বাতিল হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ হয়। এক পর্যায়ে ছবি তোলার কারণে সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয়।
উল্লেখ্য, গত ২০ জুলাই সকালে সিদ্ধিরগেঞ্জের মিজমিজি পূর্বপাড়া এলাকায় বাক প্রতিবন্ধী সিরাজুল ইসলাম তার একমাত্র মেয়ে মঞ্জুকে দেখতে যান। ওই সময় স্থানীয় লোকজন তাকে ছেলে ধরা আখ্যা দিয়ে নির্মম ভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। ঘটনার ৮ মাস আগে সিরাজুল ইসলামকে ছেড়ে তার স্ত্রী শামসুন্নাহার প্রতিবেশি সোহেলের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পালিয়ে যায়। বাক প্রতিবন্ধী হলেও সিরাজুল ইসলাম পেশায় রাজমিস্ত্রীর সহকারি হিসেবে কাজ করতেন। একমাত্র মেয়ে মঞ্জুকে নিয়ে স্ত্রী শামসুন্নাহার পালিয়ে যাওয়ার পর সিরাজ মেয়ের জন্য পাগল হয়ে উঠে। একপর্যায়ে জানতে পারে মিজমিজি পূর্বপাড়া এলাকায় পরকীয়া প্রেমিক সোহেলকে নিয়ে বাসা ভাড়া নিয়েছে স্ত্রী শামসুন্নাহার। একারণে ঘটনার দিন মিজমিজি পূর্বপাড়া এলাকায় মেয়েকে একনজর দেখতে গেলে সিরাজকে ছেলে ধরা সন্দেহে গণপিটুনি দেয় স্থানীয়রা। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় সিরাজ হামলাকারীদের কিছু বলতে পারেনি। ঘটনার সময় পদ্মা সেতুতে শিশুদের মাথা লাগবে এমন একটি গুজবের কারণে প্রায়ই ছেলে ধরা সন্দেহে নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে গণপিটুনির ঘটনা ঘটতে থাকে। ওইসব ঘটনায় সিরাজের মতো অনেক নিরপরাধ মানুষ প্রাণ হারায়। সিরাজ নিহতের ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই শাহাদাত বাদী হয়ে ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত পরিচয় চারশ জনের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
Leave a Reply