নিজস্ব প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ:
সাংবাদিকদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার তক্কারমাঠ এলাকায় বসবাস করা কথিত চৌধুরী পরিবার ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) নারায়ণগঞ্জ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ফরিদুল ইসলাম নয়ন। মামলার পিটিশন নম্বর ৭৫২/২০২৫।
মামলায় স্পষ্টভাবে অভিযুক্ত হিসেবে নাম উল্লেখ করা হয়েছে চৌধুরী আশিক আহাম্মেদ রনি, পিতা গোলাম আহমদ চৌধুরী; আশা চৌধুরী, পিতা আলমগীর চৌধুরী; এবং সুলাইমান চৌধুরী বিশাল, পিতা আলমগীর চৌধুরী। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাত আরও পাঁচজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া বাসায় বসবাস করা কথিত চৌধুরী পরিবারটি বিভিন্ন অসামাজিক এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। পরিবারের কর্তা আলমগীর চৌধুরী স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত হলেও বাস্তবে তিনি রামারবাগ এলাকার একটি ডায়িং ফ্যাক্টরিতে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কর্মরত। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আলমগীর চৌধুরী বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলের কট্টর সমর্থক ছিলেন। তার রাজনৈতিক প্রভাবে ওই সময় বিএনপির একজন সাবেক ছাত্রদল কর্মীকে বিভিন্ন সময় হুমকি ধমকি এবং চাপ দিয়ে হয়রানি করা হতো। পরে ৫ আগস্টের পর ওই সাবেক ছাত্রদল কর্মী ফতুল্লা থানায় আলমগীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
আলমগীর চৌধুরীর ছেলে সুলাইমান চৌধুরী বিশাল বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের জালকুড়ির আল মিকাত মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত। তার বিরুদ্ধে অতীতে সমকামী আচরণ এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল, যা এক পর্যায়ে অন্য মাদ্রাসা থেকে ক্ষমা চেয়ে বের হওয়ার পর বর্তমান প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন। একই পরিবারের মেয়ে আশা চৌধুরী সরকারি তোলারাম কলেজের মাস্টার্স (অ্যাকাউন্টিং) বিভাগের শিক্ষার্থী। স্থানীয়দের দাবি, তার বিরুদ্ধে প্রতারণা, অনৈতিক সম্পর্কসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। আশা চৌধুরীর স্বামী আশিক আহাম্মেদ রনি, যিনি মামলার প্রধান আসামিদের একজন, তক্কারমাঠ এলাকায় বসবাস করে পরিবারিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চৌধুরী পরিবারটি বাহ্যিকভাবে শান্ত ও ভদ্র মনে হলেও তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় বহু বছর ধরে মাদক, জুয়া, প্রতারণা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, পরিবারটি প্রভাবশালী বলয়ের আড়ালে নানান অসামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে।
সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকায় চৌধুরী পরিবারের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের পর সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম নয়ন নিয়মিতভাবে হুমকির মুখে ছিলেন। সম্প্রতি অনুসন্ধানী দলের সদস্যরা তথ্য সংগ্রহে গেলে সুলাইমান চৌধুরী বিশাল এবং তার সহযোগী আবু বকর সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়ে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন। ঘটনার সময় অনুসন্ধানী দলের সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং নিরাপত্তার স্বার্থে আদালতের শরণাপন্ন হন।
নিজের এবং সহকর্মীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় ফরিদুল ইসলাম নয়ন আদালতের আশ্রয় নেন। স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা মনে করেন, কথিত চৌধুরী পরিবারটি বহুদিন ধরে এলাকায় প্রভাবশালী বলয়ের আড়ালে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা এবং হুমকির ঘটনা এলাকার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মামলাটি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আদালত প্রাথমিক তদন্ত শেষে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।



















