ইশ্বরকাঠি গ্রামের বাড়ির উঠানে যখন আবুল কালামের নিথর দেহ রাখা হয়, তখন পাশে বসে ছিলেন স্ত্রী আইরিন আক্তার। চোখে অঝোর জল আর কণ্ঠে আহাজারি। বারবার বলছিলেন, ‘বাচ্চাগুলোর মুখটা আমি একা কীভাবে দেখব? ওরা তো এখনো বোঝে না বাবা হারানো কী জিনিস। বাচ্চাদের কীভাবে বলব, ওদের বাবা আর কোনোদিন আসবে না।’
তার এই বুকভাঙা কান্না মুহূর্তেই কাঁদিয়ে তোলে ইশ্বরকাঠি গ্রামের সবাইকে। যে বাড়িতে প্রতিদিন হাসি-খুশি আর সন্তানের কোলাহল ছিল, সেখানে এখন শোকের নীরবতা। এদিন সকাল থেকেই চারদিক থেকে ছুটে আসেন স্বজন, প্রতিবেশী ও গ্রামের শত শত মানুষ।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকালে গ্রামের বাড়ি ইশ্বরকাঠিতে আনা হয় মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাডে নিহত আবুল কালামের মরদেহ। এরপর সকাল ৯টার দিকে গ্রামের নিজ বাড়ির উঠানে অনুষ্ঠিত হয় আবুল কালামের দ্বিতীয় জানাজা। জানাজায় অংশ নেন গ্রামের মানুষ, স্বজন, বন্ধুবান্ধব— কেউই চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। পরে তাকে দাফন করা হয় নড়িয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কবরস্থানে।
এর আগে, রোববার (২৬ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের নতুন আইলপাড়া বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জানাজা। সেখানে সহকর্মী, বন্ধু ও স্থানীয় মানুষজন উপস্থিত হয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান এই প্রাণবন্ত মানুষটিকে।
দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগেই ফোনে কথা হয়েছিল তার মেঝভাবি আছমা বেগমের সঙ্গে। আবুল কালাম তখন বলেছিলেন, ভাবি, দু-এক দিনের মধ্যে বাড়ি আসব, ইলিশ মাছ কিনে রাখেন।
কিন্তু কে জানত, সেটাই হবে জীবনের শেষ আলাপ! আছমা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ভাইটা তো বলেছিল আসবে, এখন শুধু তার নিথর দেহটাই এলো।
চাচাতো ভাই নোমান বেপারি বলেন, সে সবসময় বলত— রাজনীতি না করে লেখাপড়া করো, ভালো কিছু করো। আজ যে এমন পরামর্শ দিত, সেই ভাইয়া নিজেই চলে গেলেন।
উল্লেখ্য, রোববার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর ফার্মগেট মেট্রো স্টেশনের কাছে ঘটে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যে, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের সামনে দিয়ে হাঁটার সময় ওপর থেকে হঠাৎ এক ভারী বিয়ারিং প্যাড (স্প্রিং) ছিটকে নিচে পড়ে তার মাথায় আঘাত হানে। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন কালাম। স্থানীয়রা দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আবুল কালাম শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ইশ্বরকাঠি গ্রামের মৃত জলিল চোকদারের ছেলে। পেশায় তিনি একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ছিলেন। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলি এলাকায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন।