সাদাপাথরের পর এবার বালু লুটের মহোৎসব চলছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীতে। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র মব সৃষ্টি করে দিনে-দুপুরে নদীর পাড় কেটে বালি উত্তোলন করছে। এসব বালু পাথর মিশ্রিত অবস্থায় বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে শতবর্ষী শাহ আরেফিনের মাজার, অদ্বৈত মহাপ্রভুর আশ্রম, বিখ্যাত শিমুল বাগানসহ নদীর দুই পাড়ের অন্তত ২০টি গ্রাম ও পর্যটন সম্ভাবনাময় যাদুকাটা অঞ্চল।
তাহিরপুর উপজেলার ভারত সীমান্তঘেঁষা যাদুকাটা নদী একসময় ছিল দেশের অন্যতম সুন্দর পর্যটন গন্তব্য। কিন্তু এখন সেই নদীর বুকেই চলছে বালু লুটের মহোৎসব। দিনের আলোয় শত শত শ্রমিক নৌকায় করে নদীর দুই তীর কেটে বালি তুলছে, যেন উৎসব চলছে নদী লুটের।
স্থানীয়রা জানান, ২ অক্টোবর থেকে প্রতিদিনই হাজার হাজার শ্রমিক দিয়ে কেটে নেওয়া হচ্ছে নদীর দুই পাড়ের বালি। সপ্তাহখানেকেই শত একরের বেশি এলাকা থেকে বালি লুট হয়েছে বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি উচ্চ আদালতের অনুমতিতে ‘জিনানা এন্টারপ্রাইজ’ ও ‘তাহিয়া স্টোন ক্রাশার’ নামের দুটি প্রতিষ্ঠান যাদুকাটা নদীতে বালি উত্তোলনের অনুমতি পায়। কিন্তু স্থান নির্ধারণ নিয়ে ইজারাদারদের সঙ্গে স্থানীয়দের বিরোধ দেখা দেয়। অভিযোগ, ইজারাবিহীন এলাকা থেকেও বালি কাটা শুরু হয়। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে নির্দিষ্ট এলাকা চিহ্নিত করা হলেও ইজারাদারদের ছত্রছায়ায় একটি সিন্ডিকেট পুরো নদীজুড়ে দখল নেয়। এই সিন্ডিকেট মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নদীতীরের জমি দখল করে বালু বিক্রি করছে। রাতারাতি মব সৃষ্টি করে নদীর পাড় কেটে বালু তুলে নিচ্ছে তারা।ভ য়ে মুখ খুলতে পারছে না কেউ।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাতদিন বালু তোলা চলছে। পাহারা দিলেও লাভ হয় না। প্রশাসন জানে, তবুও কিছু করছে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যাদুকাটা নদীর পাড় কাটার সঙ্গে জড়িত লাউড়েরগড় গ্রামের আব্দুল কাইয়ুম মাস্টার, খাজা নাজিমুদ্দিন, শাহজাহান মিয়া, ডাক্তার জাহাঙ্গীর, মনিরাজসহ অন্তত ২০ জনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এছাড়া বালু বিক্রির সঙ্গে যুক্ত আরও ২৯ জনের একটি তালিকাও পাওয়া গেছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে আব্দুল কাইয়ুম মাস্টার বলেন, আমাদের নামে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা অপপ্রচার আমি বালু বিক্রিতে জড়িত না।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, লোকবল সংকট থাকলেও বালু লুটে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নদী রক্ষায় অভিযান অব্যাহত থাকবে।