বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী প্রমীলা দেবীর স্মৃতিবিজড়িত ৩০০ বছরের পুরোনো তেওতা জমিদার বাড়ি রক্ষার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে। গত ১৯ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন যুক্ত করে রিটটি করেন আইনজীবী জাহিদ আহাম্মেদ হিরো।
রিটে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি), মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বিবাদী করা হয়েছে।
সতেরো শতকে পঞ্চানন সেন নামক একজন জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেন। তিনি দিনাজপুর অঞ্চলের ব্যবসায়ী ছিলেন। তেওতা জমিদার বাড়ি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী প্রমীলা দেবীর স্মৃতিবিজড়িত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা জমিদার বাড়িতে কাজী নজরুল ইসলাম প্রমীলা দেবীর রূপে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন –‘তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি, প্রিয় সেকি মোর অপরাধ।’
হাইকোর্টের বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী।
কাজী নজরুল ইসলাম ও প্রমীলা দেবীর প্রেমের স্মৃতির সাক্ষী তেওতা জমিদার বাড়ির পাশেই ছিল প্রমীলা দেবীর বাবার বাড়ি। প্রমীলা দেবীর পিতা বসন্ত সেনের ভ্রাতুষ্পুত্র বীরেন সেনের সঙ্গে কবির সখ্যতার কারণে কবি তাদের বাড়িতে অবাধ যাতায়াত করতে পারতেন। ব্যবসায়ী পঞ্চানন সেন প্রায় সাড়ে সাত একর জায়গার উপর ৫৫ কক্ষবিশিষ্ট এ দৃষ্টিনন্দন বাড়িটির গোড়াপত্তন করেন। তেওতা জমিদারবাড়ির সামনে ১৮৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ৭৫ ফুট উচ্চতার নবরত্ন মন্দিরটি এখনো অক্ষত রয়ে গেছে।
তেওতা জমিদার বাড়ির প্রধান ভবনের উত্তরের ভবনগুলোকে হেমশংকর এস্টেট এবং দক্ষিণের ভবনগুলোকে জয়শংকর এস্টেট নিয়েছিল। প্রতিটি এস্টেটের সামনে নাটমন্দির অবস্থিত, পূর্ব দিকের লালদিঘী বাড়িটি জমিদারদের অন্দর মহল হিসেবে ব্যবহৃত হত। দিঘীতে দুটি শান বাঁধানো ঘাটলা এবং দক্ষিণ পাশে একটি চোরা কুঠুরি বা অন্ধকূপ রয়েছে।
উত্তরদিকের ভবনের সামনে ৭৫ ফুট উঁচু ৪তলা নবরত্ন মঠ রয়েছে। নবরত্ন মঠের প্রথম ও দ্বিতীয় তলার চারদিকে আরও চারটি মঠ আছে।