বাবার রেখে যাওয়া বাড়ি দখলে নিতে বৃদ্ধ মাকে বাড়িতে প্রবেশ করতে না দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মাকে হুমকি ভাবছেন তিনি। মা যাতে ঘরে ঢুকতে না পারেন, সেজন্য বাড়ির সিঁড়িতে লোহার ফটকে দিয়েছেন তালা।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছেলে জুমাতুল এম ইসলাম সৌরভসহ (৩২) আরও দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (১৪ জুলাই) নওগাঁ শহরের কাজীর মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ওই বৃদ্ধার নাম বিলকিস আক্তার (৬২)। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। ছোট মেয়ে কানাডায় থাকেন।
কথা বলে জানা যায়, শহরের কাজীর মোড়ে বিলকিস আক্তারের স্বামী নিজের ১০ শতাংশ জমির ওপর প্রায় ৩০ বছর আগে দোতলা বাড়ি নির্মাণ করেন। ওই বাড়ির দোতলার একটি ফ্ল্যাটে তিনি বসবাস করে আসছিলেন। সোমবার বেলা ১১টার দিকে মেয়ের বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে আসতে চাইলে প্রবেশে বাধা দেন তার ছেলে। পরে সিঁড়ির পাশেই সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বসেছিলেন বৃদ্ধা ওই মা।
ঘটনাটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ওই বাড়িতে ছুটে যান মানবাধিকার কর্মীরা। গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীদের সামনেই মা এবং ছেলের পক্ষে লোকজনের মধ্যে হাতাহাতি এবং সংঘর্ষ হয়। পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে দুই পক্ষকেই থানায় আলোচনার জন্য নিয়ে যায়।
মাকে বাড়িতে প্রবেশে বাধা এবং হামলার ঘটনায় গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন বৃদ্ধা বিলকিস আক্তারের ছেলে জুমাতুল এম ইসলাম সৌরভ (৩২), হামলা ও মারামারির ঘটনায় জড়িত থাকায় শহরের চকদেব এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ খোকন (৪৫) এবং শহরের কাজীর মোড় এলাকার চান্দুর ছেলে নাহিদ ইসলাম (৩৫)।
গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী।
পুলিশ জানায়, বৃদ্ধ মাকে বাড়িতে প্রবেশ করতে বাধা দেয় তার ছেলে সৌরভ এবং তার বন্ধুরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশ দুই পক্ষকেই আলোচনার জন্য থানায় নিয়ে আসে। আলোচনা চলা অবস্থায় সৌরভ তার মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং মারধর করতে চায়। পুলিশ তখন তাকে আটক করে। পরে বৃদ্ধা ওই মা কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে মামলা করলে অভিযুক্তদের রাতে গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়।
স্থানীয়রা জানান, ২০২১ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর বসতবাড়ির জমি নিয়ে ছেলে জুমাতুল এম ইসলাম সৌরভের সঙ্গে বিলকিস আক্তারের বিরোধ সৃষ্টি হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর আইন অনুযায়ী বিলকিস আক্তার ও তার তিন সন্তান ওই বসতবাড়ির অংশীদার হন। কিন্তু বসতবাড়ির পুরো সম্পত্তি দেওয়ার জন্য সৌরভ তার মাকে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু মা ও বোনেরা তাকে বসতবাড়ির জমি লিখে দিতে রাজি না হওয়ায় পারিবারিক বিরোধ দেখা দেয়।
ছেলের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় বিলকিস আক্তার ২০২১ সাল থেকে বেশিরভাগ সময় নওগাঁ শহরেই বড় মেয়ের বাড়িতে থাকছেন।