যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাশনাল গার্ড সাধারণত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় মোতায়েন করা হলেও এর আরও ব্যবহারের ইতিহাস রয়েছে। এই বাহিনীর ক্ষমতা কী এবং কে এর নিয়ন্ত্রণ করেন— জেনে নেওয়া যাক সেসব বিষয়।
ন্যাশনাল গার্ড কী?
ন্যাশনাল গার্ড যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর রিজার্ভ বাহিনীর অংশ। এটি দুটি শাখায় বিভক্ত: আর্মি ন্যাশনাল গার্ড এবং এয়ার ন্যাশনাল গার্ড। ১৯০৩ সালে মিলিশিয়া আইন অনুযায়ী এটি গঠিত হয়। বর্তমান কাঠামো নির্ধারিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আইনের মাধ্যমে।
ন্যাশনাল গার্ড কোথায় মোতায়েন হয়?
ন্যাশনাল গার্ডের দায়িত্ব বহুবিধ। এটি প্রায়ই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা প্রদান করে। সবশেষ ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ক্যালিফোর্নিয়ার ভয়াবহ দাবানল নিয়ন্ত্রণে এই বাহিনী মোতায়েন করা হয়। ২০০৫ সালে হারিকেন ক্যাটরিনার সময় ৫০ হাজারেরও বেশি ন্যাশনাল গার্ড সদস্য নিউ অরলিন্সে উদ্ধার তৎপরতা, সরিয়ে নেওয়া এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
ভূমি নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রেও এটি মোতায়েন হতে পারে। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির মার্কিন কংগ্রেস ভবন দখলের ঘটনার পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানের সময় ওয়াশিংটন ডিসিতে নিরাপত্তা নিশ্চিতে ২৫ হাজারেরও বেশি ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। ২০২০ সালে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে হওয়া বিক্ষোভে বহু অঙ্গরাজ্যে স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছিল।
এছাড়া, ন্যাশনাল গার্ড বিদেশে সামরিক অভিযানে অংশ নিতে পারে, যেমন ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধে।
ন্যাশনাল গার্ডের কমান্ড কার হাতে?
ন্যাশনাল গার্ড সদস্যরা যখন কোনো অঙ্গরাজ্যের অভ্যন্তরে মোতায়েন থাকেন, তখন সংশ্লিষ্ট রাজ্যের গভর্নর তাদের কমান্ডার হন। তবে যখন পুরো দেশের ক্ষেত্রে মোতায়েন করা হয়, তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সর্বাধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ায় আইসিই (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) অভিযান ঘিরে লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভের সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গভর্নর গ্যাভিন নিউজমের অনুমতি ছাড়াই ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের নির্দেশ দেন। তিনি এই পদক্ষেপের পক্ষে জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখান।
এ নিয়ে গভর্নর নিউজম অভিযোগ করেন, ট্রাম্প প্রশাসন ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ উত্তেজনা বাড়াতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
ন্যাশনাল গার্ডে কে যোগ দিতে পারে?
সাধারণভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সব নাগরিক ন্যাশনাল গার্ডে যোগ দেওয়ার যোগ্য। তবে তাদের নির্দিষ্ট শারীরিক, মানসিক ও আইনি যোগ্যতা পূরণ করতে হয়। অধিকাংশ সদস্য খণ্ডকালীন হিসেবে সেবা দেন, তবে কিছু সদস্য পূর্ণকালীনও থাকেন।
যেসব সেনাসদস্য নিয়মিত সামরিক বাহিনীতে সেবা শেষ করেছেন, তারা অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়াই ন্যাশনাল গার্ডে যোগ দিতে পারেন।
আরেকটি পথ হলো সরাসরি ন্যাশনাল গার্ডে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যোগ দেওয়া। এ ক্ষেত্রে সামরিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে হয়।
ন্যাশনাল গার্ডের সাধারণ দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে মাসে একবার এক সপ্তাহান্তের অনুশীলন এবং বছরে দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণ। একেক সদস্য সপ্তাহান্তের দায়িত্ব পালনের জন্য ২০০ থেকে ৬০০ মার্কিন ডলার (১৭৫-৫২৫ ইউরো) পর্যন্ত ভাতা পান। এ ছাড়া, তাদের আবাসন, খাদ্য, শিক্ষা সহায়তা ও স্বাস্থ্য বিমার সুবিধা দেওয়া হয়। দীর্ঘমেয়াদি সেবার জন্য পেনশন সুবিধাও দেওয়া হয়।