* আইনে ৯ থেকে ১২ বছরের কম বয়সীর কাজ অপরাধ নয়
* এজাহারে বয়স ১১ লেখা হলেও প্রকৃত বয়স ১২: পুলিশ
রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মোবাইল চুরির ঘটনায় করা মামলায় ১১ বছর বয়সী এক কন্যাশিশুকে আসামি করার ঘটনা ঘটেছে। গত ২৭ মে ওই শিশুকন্যাসহ চার নারীকে আসামি করে মামলাটি করা হয়। মামলায় অভিযুক্তদের দুজন শিশু ও দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক।
আইন অনুযায়ী ৯ থেকে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুরা কোনো অপরাধ করলে, তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না। ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি আইনের ৮৩ ধারা অনুযায়ী, ৯ থেকে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুর দ্বারা সংঘটিত কোনো কাজ অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না, যদি সে তার কার্যক্রমের প্রকৃতি ও পরিণতি বোঝার মতো পরিপক্বতা অর্জন না করে।
আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে শিশুকে মামলার আসামি করার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দাউদ হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট থানার উপ-পরিদর্শক মো. সাখাওয়াত হোসেনকেও শোকজ করা হয়েছে। বুধবার (২৮ মে) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক মো. গোলাম কবির এ শোকজ দেন। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে খিলগাঁও থানার ওসি ও সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে আদালত আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও নোটিশে বলা হয়।
ওই শিশুর বয়স এজাহারে ১১ বছর লেখা হলেও, তার বয়স মূলত ১২ বছর। ফরোয়ার্ডিংয়ে (আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন) শিশুর বয়স ১২ বছর লেখা হয়েছে। ওই শিশু চুরি করেছে, তার সিসিটিভি ফুটেজ আছে। শিশু অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে দোষীপত্র দেওয়া হয়।
যদিও খিলগাঁও থানা পুলিশের দাবি, শিশুটির বয়স এজাহারে ১১ বছর লেখা হলেও তার বয়স মূলত ১২ বছর। তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদনে বয়স ১২ বছর বলে উল্লেখ করা হয় বলেও থানা সূত্রে জানা গেছে। এদিকে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ওই শিশুকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
জানা যায়, গত ২৭ মে খিলগাঁও থানাধীন গোড়ান মাজার গলিতে বাপ্পি পরিবহন নামের গ্যারেজে একটি মোবাইল চুরির ঘটনায় একটি মামলা করা হয়। গ্যারেজের কর্মচারী শুক্কুর আলী (২৪) বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলার আসামি খিলগাঁও এলাকার ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরী, ২৩ ও ২২ বছর বয়সী দুই নারী ও ১১ বছর বয়সী এক কন্যাশিশু। তাদের সবার স্থায়ী ঠিকানা হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানার বোল্লা গ্রাম। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক দুজন বোন। অন্যদিকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক দুজনও সম্পর্কে পরস্পরের বোন।
এদের মধ্যে ১১ বছর বয়সী ওই কন্যাশিশুকে আসামি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করায় থানার ওসি ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে।
মামলার আসামি খিলগাঁও এলাকার ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরী, ২৩ ও ২২ বছর বয়সী দুই নারী ও ১১ বছর বয়সী এক কন্যাশিশু। তাদের সবার স্থায়ী ঠিকানা হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানার বোল্লা গ্রাম। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক দুজন বোন। অন্যদিকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক দুজনও সম্পর্কে পরস্পরের বোন।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, কারাগারে আটক রাখার আবেদনে ওই শিশুর বয়স ১২ উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে এজাহারে তার বয়স ১১ বছর বলা হয়েছে। ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি আইনের ৮৩ ধারা অনুযায়ী, ৯ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুর দ্বারা সংঘটিত অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না, যদি সে তার কার্যক্রমের প্রকৃতি ও পরিণতি বোঝার মতো পরিপক্বতা অর্জন না করে। এজাহারে ওই কন্যাশিশুর বয়স ১১ বছর উল্লেখ রয়েছে। কেন তাকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হলো? কেন থানায় কর্মরত শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা দিয়ে প্রয়োজনীয় মূল্যায়ন ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি?
নোটিশে আরও বলা হয়, আসামিদের কারাগারে আটক রাখার আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তাদের জনগণ ধরেছে এবং মারধর করেছে। দেহে জখম থাকার পরও তাদের চিকিৎসার কোনো রেকর্ড বা চিকিৎসা সনদ আদালতে দাখিল করা হয়নি। চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না তাও পরিষ্কার নয়। এছাড়া এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, মামলার প্রকৃতি বিবেচনায় কোনো ধরনের উদ্ধার তালিকা বা জব্দ তালিকা প্রস্তুত করা হয়নি। তা আদালতে পাঠানো নথির সঙ্গে দাখিলও করা হয়নি।
নোটিশে বিচারক উল্লেখ করেন, এজাহারে উল্লিখিত ঘটনার সময় ২৭ মে ভোর ৬টা ৫৫ মিনিট। বর্ণনা অনুযায়ী, স্থানীয় জনতা আসামিদের হাতেনাতে আটক করে এবং ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে খিলগাঁও থানা পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে যায়। অথচ এজাহারে সংবাদ প্রাপ্তির সময় ৪টা ১০ মিনিট উল্লেখ করা হয়েছে, যা বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি আইনের ৮৩ ধারা অনুযায়ী, ৯ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুর দ্বারা সংঘটিত অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না, যদি সে তার কার্যক্রমের প্রকৃতি ও পরিণতি বোঝার মতো পরিপক্বতা অর্জন না করে। এজাহারে ওই কন্যাশিশুর বয়স ১১ বছর উল্লেখ রয়েছে। কেন তাকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হলো? কেন থানায় কর্মরত শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা দিয়ে প্রয়োজনীয় মূল্যায়ন ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি?
চুরির ঘটনায় হওয়া মামলার এজাহারে বাদী শুকুর অভিযোগ করেন, আমি ও সিফাত হোসেন খিলগাঁও থানাধীন গোড়ান মাজার গলিতে বাপ্পি পরিবহন নামক গ্যারেজে কাজ করি। সে সুবাদে আমরা গ্যারেজের কাজ শেষে গ্যারেজেই ঘুমাই। আমি (শুকুর) ও সিফাত হোসেন গত ২৭ মে রাত আনুমানিক ১টায় প্রতিদিনের মতো রাতের খাওয়া শেষে গ্যারেজে ঘুমিয়ে পড়ি। এদিন ভোর অনুমানিক ৬টা ৫৫ মিনিটের সময় আসামিরা আমাদের গ্যারেজে দরজা খুলে প্রবেশ করে। এরপর আমাদের সিটের ওপরে থাকা সিফাত হোসেনের ব্যবহৃত ১০ হাজার টাকা মূল্যের স্যামসাং মোবাইল সেট চুরি করে নেওয়ার সময় আমি টের পেয়ে যায়। ঘুম ভেঙে গেলে আমি চোর চোর বলে চিৎকার করি। এসময় আশপাশের লোকজন দ্রুত গ্যারেজে এলে তাদের সহায়তায় আসামিদের হাতেনাতে আটক করে জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এ ফোন করি। এরপর খিলগাঁও থানা পুলিশ এসে আসামিদের থানায় নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) সাজ্জাদ হোসেন সবুজ বলেন, ১১ বছর বয়সী এক শিশুকে আসামি করে মামলা করায় সংশ্লিষ্ট থানার ওসি ও তদন্তকারী কর্মকর্তাকে শোকজ করা হয়েছে বলে শুনেছি।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী জাগো নিউজকে বলেন, ১২ বছরের কম বয়সী শিশুর সংঘটিত কার্য তো অপরাধ বলে গণ্য হয় না। এক্ষেত্রে শিশুর বয়স এজাহারে ১১ বছর লেখা হলেও তো কাজটি আইন অনুযায়ী হয়নি। এজন্য শোকজ করেছে।
শোকজপ্রাপ্ত খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দাউদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ওই শিশুর বয়স এজাহারে ১১ বছর লেখা হলেও, তার বয়স মূলত ১২ বছর। ফরোয়ার্ডিংয়ে (আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন) শিশুর বয়স ১২ বছর লেখা হয়েছে। ওই শিশু চুরি করেছে, তার সিসিটিভি ফুটেজ আছে। শিশু অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে দোষীপত্র দেওয়া হয়।
আদালতের নোটিশের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা শোকজের ব্যাখ্যা আদালতে উপস্থাপন করবো।