জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা, বিশেষত মিথেন গ্যাস নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তিনির্ভর নতুন উদ্ভাবন নিয়ে এসেছেন জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী ও তার গবেষক দল। নতুন এই উদ্ভাবনে ছত্রাকের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে গবাদিপশুর ক্ষতিকর মিথেন গ্যাস।
সোমবার (২৬ মে) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ উদ্ভাবনের বিষয়ে বিস্তারিত জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী গ্রিনহাউজ গ্যাসের অন্যতম মিথেনের বড় অংশ আসে গবাদিপশু অর্থাৎ গরু-ছাগল আর মহিষের পেট থেকে। এই জাবর কাটা প্রাণীগুলোর হজম প্রক্রিয়ার সময় ঢেঁকুর, নিশ্বাস ও বর্জ্যের মাধ্যমে বিপুল মিথেন গ্যাস নিঃসরণ হয়। বৈশ্বিকভাবে প্রতি বছর এ ধরনের গবাদিপশু থেকে নির্গত হয় প্রায় ১০০ মিলিয়ন টন মিথেন। বাংলাদেশের গবাদিপশু খাত থেকেও প্রতি বছর প্রায় ৩০ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইডের সমতুল্য মিথেন নির্গত হয়।
এই জিন বিজ্ঞানী আরও বলেন, তাদের উদ্ভাবিত বিশেষ ধরনের প্রাকৃতিক ছত্রাক, যা গবাদিপশুর হজম প্রক্রিয়ায় মিথেন উৎপাদন ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে সক্ষম। এই ছত্রাক কোনো রকম জেনেটিক মডিফিকেশন ছাড়াই কাজ করে এবং পশুর স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলে না। এটি পশুখাদ্যে ফিড অ্যাডিটিভ হিসেবে মেশালে কার্যত মিথেন নির্গমন বন্ধ হয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২৫ সালের মার্চ মাসে বায়োটেকনোলজি রিপোর্টস জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা এরইমধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই আবিষ্কারের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে নতুন কোম্পানি রোম এগ্রিকালচার। প্রতিষ্ঠানটির মডেল অনুযায়ী খামারিরাই ছোট ছোট ইউনিটে এই ছত্রাক উৎপাদন করতে পারবেন।
গবেষণার কথা উল্লেখ করে আরও জানানো হয়, সঠিক প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গবাদিপশু থেকে মিথেন নির্গমন ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব। বাংলাদেশ যদি মিথেন নির্গমন অর্ধেক কমাতে সক্ষম হয়, তাহলে এই ‘সবুজ অর্থনীতি’র সম্ভাব্য বাজারমূল্য দাঁড়াবে প্রায় ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার!
রোম, কৃষাণ ফাউন্ডেশন, মেধাসম্পদ সুরক্ষা মঞ্চ ও জ্যাকফ্রুট পোস্টের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেসিসের সাবেক সভাপতি ও বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফাহিম মাশরুর, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা ও বিএলআরআইয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সিফাত হোসাইন জয়া।