ডিজিটাল জীবনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। অফিসের কাজ, ব্যাংকিং, সামাজিক যোগাযোগ, কেনাকাটা সবই এখন অনলাইনভিত্তিক। কিন্তু এই সুবিধার ভেতর লুকিয়ে আছে ভয়ংকর এক ছায়া, যার নাম সাইবার হামলা।
প্রতিদিনই বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন। ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস, ব্যাংক একাউন্ট হ্যাক, ব্ল্যাকমেইলিং, ফিশিং স্ক্যাম এসব এখন সাধারণ মানুষের জীবনে নতুন আতঙ্কের নাম। তাই প্রয়োজন সাইবার সচেতনতা। একটু সতর্ক হলেই আমরা নিজেরাই নিজেদের প্রথম সুরক্ষার দিতে পারি।
চলুন জেনে নেই নিজেকে সুরক্ষিত রাখার কিছু উপায়-
১. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার
পাসওয়ার্ড এখন ডিজিটাল দুনিয়ার নিরাপত্তার প্রথম লক। দুর্বল পাসওয়ার্ড মানেই সাইবার অপরাধীদের জন্য খোলা দরজা। তাই পাসওয়ার্ড হতে হবে অন্তত ১২ ডিজিটের, যাতে ছোট-বড় অক্ষর, সংখ্যা এবং বিশেষ চিহ্ন থাকে। একই পাসওয়ার্ড বারবার ব্যবহার না করাই সবচেয়ে নিরাপদ। প্রয়োজনে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।
২. টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন
অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখতে দুই ধাপের যাচাই অর্থাৎ টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবস্থার বিকল্প নেই। এটি চালু রাখলে শুধু পাসওয়ার্ড দিয়ে কেউ অ্যাকসেস করতে পারবে না, দ্বিতীয় ধাপ হিসেবে আপনার মোবাইলে এসএমএস বা ই-মেইল কোড আসবে। এই ব্যবস্থা খুবই কার্যকরী। বলা চলে এই পদ্ধতি প্রায় ৯৯ শতাংশ হ্যাকিং রোধে সহায়ক।
৩. ফিশিং ও স্ক্যাম মেইল থেকে সতর্ক থাকুন
বিভিন্ন সময় ই-মেইল বা মেসেজে লোভনীয় অফার, পুরস্কার বা জরুরি লিংকের ফাঁদ পাতানো হয়। আর অনেকেই এই ফাদে পরে নিজের ক্ষতি করে বসে। স্বীকার হয় সাইবার হামলার। তাই কখনোই সন্দেহজনক লিংক বা অচেনা উৎস থেকে আসা ফাইল ডাউনলোড করবেন না। প্রতিষ্ঠান থেকে এসএমএস বা ই-মেইল এলে সেটি যাচাই করুন অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা হেল্পলাইন থেকে।
৪. সফটওয়্যার ও অপারেটিং সিস্টেম আপডেট রাখুন
পুরোনো সফটওয়্যার বা অপারেটিং সিস্টেমে নিরাপত্তার ফাঁক থেকে যায়, যেগুলো সাইবার অপরাধীরা সহজে ব্যবহার করে। তাই নিয়মিত মোবাইল, কম্পিউটার ও ব্রাউজার আপডেট রাখা অত্যন্ত জরুরি।
৫. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনতা
সোশ্যাল মিডিয়া এখন হ্যাকারদের প্রধান লক্ষ্য। ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি, লোকেশন সব শেয়ার করার আগে দ্বিতীয়বার ভাবুন। প্রাইভেসি সেটিংস ঠিকভাবে নির্ধারণ করুন। অপরিচিত ব্যক্তিদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
৬. পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহারে সতর্কতা
ফ্রি ওয়াইফাই যতই আকর্ষণীয় হোক, সেখানে আপনার তথ্য হ্যাক হওয়া খুব সহজ। জরুরি হলে ভিপিএন ব্যবহার করুন। পাবলিক নেটওয়ার্কে কখনোই ব্যাংকিং, পাসওয়ার্ড পরিবর্তন বা ব্যক্তিগত তথ্য সংক্রান্ত কাজ করবেন না।
৭. গুরুত্বপূর্ণ ডাটার ব্যাকআপ রাখুন
সাইবার হামলার কারণে আপনার ডাটা নষ্ট বা লক হয়ে যেতে পারে। তাই গুরুত্বপূর্ণ ফাইল বা ডাটার নিয়মিত ব্যাকআপ রাখুন অন্য কোথাও হোক সেটা ক্লাউড বা এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভ।
৮. সচেতনতা ও শিক্ষাই সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা
সাইবার নিরাপত্তা শুধু প্রযুক্তিগত বিষয় নয়, এটা সামাজিক সচেতনতা। পরিবার, বন্ধু, অফিস সহকর্মীদের মধ্যে সচেতনতা ছড়িয়ে দিন। নিজেরাই নিজেদের প্রথম সাইবার প্রহরী হয়ে উঠুন।
আমাদের সাইবার অপরাধীদের দোষারোপ করেই দায় শেষ করা উচিত নয়, নিজের ডিজিটাল জীবন নিরাপদ রাখার দায়িত্ব আমাদের নিজেদেরই নিতে হবে। প্রযুক্তির সুবিধার পাশাপাশি নিরাপত্তার ব্যারিকেডও নিজেকে তৈরি করতে হবে। একটু সচেতনতা আর কিছু সহজ নিয়ম মানলেই আপনি হতে পারেন সাইবার ঝুঁকিমুক্ত।