নারায়ণগঞ্জের শিল্প নগরী বিসিকে বি.কে সোহেল এক আধুনিক গিরগিটির নাম। সাধারণ গার্মেন্টস শ্রমিক সাজা এই সোহেলের রয়েছে নিকট অতীতে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারী হাসিনার দলের সংশ্লিষ্টতা। যা বেরিয়ে এসেছে বিশেষ এক অনুসন্ধানে।
ঘটনার শুরু গত ৫ মে সন্ধ্যায়। নারায়ণগঞ্জ শিল্প নগরী বিসিকে গার্মেন্টসের জুট নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে সোহেলের গ্রপের সাথে দ্বন্দে জড়ায় সুমন গ্রুপ। সেখানে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে রূপ নেয় মারামারিতে।
দুই গ্রুপের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় আহত হয় বি.কে সোহেল। স্থানীয় বিএনপির সহায়তায় সুমন গ্রুপের প্রধান সুমন ঘটনা স্থলে উপস্থিত না থাকলেও ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা হয় ১ নাম্বার আসামী হিসেবে!
পরবর্তীতে আহত সোহেলের পক্ষ নিয়ে স্থানীয় বিএনপির একটি অংশ ও সোহেল গ্রুপের লোকজন বিভিন্ন সময় সুমনকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশসহ জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।
সোহেলের উপর হামলার প্রতিবাদে সোমবার (১২ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় পশ্চিম মাসদাইর এলাকাবাসীর ব্যানারে বিএনপির নেতাকর্মীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করেছেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা মহিলাদলের সহ-সভাপতি রুজিনা আক্তার, এনায়েত নগর ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সেক্রেটারি সাদেক দেওয়ান, জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইয়াছিন আরাফাত, ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জসিম প্রধান, সহ-সভাপতি মো. জিলানী ফকির, যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল প্রধান, ফতুল্লা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল সরকার। যাদের দেখে এলাকাবাসীর অনেকেই হতবাক হয়েছেন।
এই ঘটনায় এলাকাবাসীর হতবাক হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, বি.কে সোহেল ছিলো মূলত ফ্যাসিস্ট পতিত স্বৈরাচার সংগঠন আওয়ামীলীগের বিসিক শিল্প এলাকার চাঁদাবাজি ও জুট দখলের মূল হোতা।
বি.কে সোহেল ছিলো নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম র্যাফেল ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদের ঘনিষ্ঠ সহচর।
সে সময় সোহেল র্যাফেল ও রিয়াদের নাম ভাঙিয়ে হেন কোন কাজ নেই সে করতো না। বিসিক এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতে ছিলো সিদ্ধহস্ত। তার ভয়ে অনেকেই মুখ খুলতে পারতো না।
বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিকলীগের নারায়ণগঞ্জ জেলার সহ-সম্পাসক পরিচয়ে ভিজিটিং কার্ড করে বিসিক এলাকায় ব্যবসায়ীদের দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গার্মেন্টসে চাঁদা আদায় সহ জুট দখলের জন্য আতঙ্ক সৃষ্টি করতো বলে জানায় এলাকাবাসী।
২৪ এর আগষ্ট পরবর্তী সময়ে রাতারাতি ফ্যাসিবাদী সংগঠন আওয়ামীলীগের ছাতা থেকে বেরিয়ে বিএনপির ছায়াতলে আশ্রয় নেয় এলাকায় পল্টিবাজ ও গিরগিটি নামে পরিচিত সোহেল।
স্থানীয় বিএনপিকে এই আওয়ামীলীগের সোহেলের জন্য মায়াকান্না করতে দেখে হতবাক হয়ে যায় এলাকাবাসী। তারা বলেন, সোহেল বিএনপির একটি অংশকে কি এমন টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে যে, তারা মানববন্ধন করতে জেলা পুলিশ সুপার ও প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করতে পারলো! সেখানে তো এলাকাবাসী যায়নি!
এলাকাবাসী আরও জানায়, সুমনও তো বিএনপি করে। তার জন্য তো বিএনপির ঐ অংশকে কোন কথা বলতে দেখলাম না। সুমন বা তার গ্রুপ যদি অন্যায় ভাবে সোহেলের উপর হামলা করে এবং এর জন্য যদি বিএনপি করা সুমন দোষী হয় সেটা প্রশাসন দেখবে। তার জন্য আইন আছে। আদালত আছে। বিচার হবে। তাই বলে আওয়ামীলীগের দোসরদের পক্ষ হয়ে মানববন্ধন করা লাগবে বিএনপির পদধারী নেতা-কর্মীদের?
নারায়ণগঞ্জ বিসিক শিল্প এলাকা হোক সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি মুক্ত সেটাই এখন এলাকাবাসীর চাওয়া।