বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না বিকেএমইএ এর বিতর্কিত সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের।
ফ্যাসিস্ট সরকারের দেড় দশকের পুরোটা সময় জুড়ে বিকেএমইএ এর স্বঘোষিত দখলদার সভাপতি সেলিম ওসমানের সাথে থেকে সকল ধরনের অপকর্মে রাজস্বাক্ষী ছিলেন এই হাতেম ।
৫ আগষ্টের পূর্বেও শেখ হাসিনাকে তৈলমর্দন করার ভিডিও ভাইরাল হলেও আওয়ামী লীগের পতনের পর সূর পাল্টে নতুন ছোলম গায়ে দিয়ে বিকেএমইএ এর স্বঘোষিত সভাপতি বনে গিয়ে বিএনপি, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন কিছু ছাত্রনেতাদের ম্যানেজ করে নগদ অর্থ দিয়ে তার ছবি ফলাও করে প্রচার ছাড়াও নানা কৌশলে বিকেএমইএ দখল করে সেলিম ওসমানের চেলাখ্যাত হাতেম। একই সাথে সেই পলাতক ওসমান পরিবারের অপরাধীদের মতো নিজেকে আলোচনায় রাখতে প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে নানা বিষয়ে আলোচনায় এসে নিজের অবস্থান জানান দেন চতুর এই হাতেম।
বাকপটু এই হাতেম চাঁদাবাজদের চাঁদা দিয়ে ফের সেই চাঁদা ফেরৎ আনতে কত ই না নাটক মঞ্চায়ন করে বিতর্কের শীর্ষে অবস্থান নেন।
এরপর সিদ্ধিরগঞ্জে এক ব্যবসায়ীর জমি নামজারি করতে ৩১ লাখ ৯১ হাজার টাকা ঘুষের সেই অর্থ ফেরত আনাসহ সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমি কর্মকর্তা লাক্স সুন্দরী ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানজিমা আঞ্জুম সোহানিয়া, কাননগো ফারুক আলম, ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, তহসিলদার জহিরুল ইসলাম কে সাময়িক বরখাস্ত করে তোলপাড় সৃষ্টি করে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের দপ্তরে দপ্তরে।
২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ঘুষের ৩১ লাখ ৯১ হাজার টাকা এক ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে সেই অর্থ ফেরত নেয়ার এমন খবরে পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে এক আতংকের নাম হিসেবে হাতেম কে সকলেই বিবেচনা করে।
একই সাথে এই হাতেম কথায় কথায় উপদেষ্টাদের নাম ব্যবহার ছাড়াও সারজিস আলমের নাম ব্যবহার করে নিজেকে প্রচার করেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে।
এমন ঘটনা ঘটিয়ে পুরো জেলা প্রশাসনে ওসমানীয় কায়দায় সকল সরকারি দপ্তরে প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে এই হাতেম।
এমন ঘটনা ছাড়াও আওয়ামী লীগের শাসনামলে নারায়ণগঞ্জ জেলার গডফাদারখ্যাত এমপি শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুর অত্যান্ত আস্থাভাজন ক্যাশিয়ার ড্রাইভার পুত্র ও নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সহ সভাপতি এম এম রানা ৪২ লাখ টাকাসহ আটক হলে এই রানাকে ছাড়াতে জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হকের কাছে তদ্বির করে এই হাতেম। এমন গুঞ্জনের পর এবার নারায়ণগঞ্জ শহরের চানমারী এলাকায় একটি পত্রিকার কার্যালয়ে জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনায় এবার নাম উঠে আসে বিকেএমইএ এর বিতর্কিত সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের ।
এবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক উপদেষ্টার নাম ব্যবহার করে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার চাঁনমারিতে জমি দখলের চেষ্টা স্থানীয় পত্রিকা অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে শহরের আলোচিত সন্ত্রাসী রিন্টু বাহিনীর বিরুদ্ধে। যার নেপথ্যে আলোচনায় উঠে আসে মোহাম্মদ হাতেমের নাম।
গতকাল বুধবার সকাল ১১ টায় ঘটে পত্রিকার কার্যালয়ে হামলার ঘটনা।
সন্ত্রাসীরা ওই জমিতে প্রবেশ করে নিরাপত্তাকর্মীদের মারধর করে গোডাউন ভাঙচুর করে। এসময় তারা সিসি ক্যামেরাও ভাঙচুর করে সাইনবোর্ড ভেঙ্গে ফেলে। প্রায় দুই শতাধিক সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ওই জমিতে হামলা করে। এসময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জমির মালিক তাইজুল ইসলাম রাজীব জানান, এ জমিটি প্রায় তিন দশক আগে আমার বাবা জমিটি কিনেছেন। এরপর থেকেই জমিটি আমরা ভোগ দখল করে আসছি। আজ সকালে এক উপদেষ্টার ভাগ্নে পরিচয়ে রিন্টু বাহিনী আমাদের জমি দখল করতে আসে। প্রায় দুই শতাধিক সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের জমিতে সাইনবোর্ড লাগাতে আসে। এসময় তারা আমার জমির নিরাপত্তাকর্মীকে মারধর করে। সিসি ক্যামেরা ও দৈনিক উজ্জীবিত বাংলাদেশ পত্রিকার সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে। তারা জমিটির ভেতরে ভাড়া দেয়া গোডাউন এর তালা ভেঙ্গে ভাড়াটিয়াদের মালও লুট করে।
তিনি আরো জানান, এক ব্যবসায়ী নেতা গতকাল আমাদের এক প্রতিনিধিকে ফোন করেছিলেন। জমিটি নিয়ে এক উপদেষ্টার স্বামী তাকে ফোন দিয়েছিল বলে তিনি জানিয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে আমাদের সাথে বসতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার আগেই আজ সকালে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় আইনি প্রদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, ভূমিদস্যু, ঝুট ব্যবসায়ী হাতেম এই জমিটি দখলে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়াচ্ছেন। এর আগেও হাতেম কয়েকদফা ভুক্তভোগীদের কাছে টেলিফোনে জমিটি ছেড়ে দেয়ার জন্য হুমকি দিয়েছেন।
জমিটির স্থানে অবস্থিত স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক উজ্জীবিত বাংলাদেশ এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কবিরুল ইসলাম জানান, জমি নিয়ে বিরোধ থাকলে আইন আদালত আছে। কিন্তু তারা অন্যায়ভাবে জমিতে প্রবেশ করে ভাঙচুর বা লুটপাট করতে পারে না। আমার অফিসের সাইনবোর্ড ও সিসি ক্যামেরা ভেঙ্গেছে। নিরাপত্তাকর্মীকে মারধর করেছে।
ফতুল্লার মডেল থানার উপ পরিদর্শক আতিক জানান, একদল বাহিনী এখানে জায়গা দখল করতে আসে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসা হয়। যারা দখল করতে এসেছে যা কিনা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শামিল এ ব্যাপারে আইনি প্রতিকক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
জমি দখল করতে আসা সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান রিন্টুকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পালিয়ে যান।
এমন জমি দখলের ঘটনায় মোহাম্মদ হাতেমের নাম উঠে আসায় আরাবো ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে নানা অপকর্মের হোতা ওসমান পরিবারের অন্যতম দালাল বিতর্কিত হাতেম কে ঘিরে।