আলোরধারা ডেস্ক:
দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে রাজনীতি করে আসছিল জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগের সব অপকর্মে তাদের পরোক্ষ ভূমিকা ছিল। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে ক্ষমতার স্বাদ নিতো জাতীয় পার্টি। তবে গত ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিপদে পড়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। বর্তমানে তারা ছাত্র-জনতার আক্রোশে পড়েছেন। আওয়ামী লীগের মতোন জাতীয় পার্টির কিছুসংখ্যক নেতাকর্মী দেশ ছেড়ে পালাতে সক্ষম হলেও অধিকাংশ নেতাকর্মীরা দেশের মধ্যেই রয়ে গেছেন।
তাদের গুরুত্ব কমার পাশাপাশি বর্তমানে নেই কোনো গ্রহণযোগ্য। বিএনপির মতোন তারা কোথাও কোনো রাজনীতি করার সুযোগও পাচ্ছেন না। বিশেষ করে গত বৃহস্পতিবার জাপার সঙ্গে ছাত্র জনতার সংঘর্ষের ঘটনায় সাধারণ মানুষ থেকে জাতীয় পার্টি আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অন্যান্য জেলার মতোন নারায়ণগঞ্জের জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদেরও একই দশা। এখানকার সাবেক দ্ইু এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা এবং একেএম সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির নেতা হলেও তারা পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের লোক ছিল। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মকান্ডে তারা সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল। এদের মধ্যে লিয়াকত হোসেন খোকাকে নিজ নির্বাচনী এলাকা সোনারগাঁয়ে প্রকাশ্যে দেখা গেলেও গত ৫ আগস্টের পর থেকে সেলিম ওসমানকে নারায়নগঞ্জে দেখা যাচ্ছে না। তিনি বর্তমানে কোথায় আছেন, দেশে নাকি বিদেশে আছেন তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। সব মিলিয়ে নারায়ণগঞ্জে আগামীতে জাতীয় পার্টির রাজনীতি করা অনেক দু:সাধ্য বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। সেই সঙ্গে ভোটারদের নিকট জাতীয় পার্টির গ্রহণযোগ্যতাও থাকবে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
জানা যায়, মহাজোট গঠন করার স্বার্থে আওয়ামী লীগ টানা দুইবার সোনারগাঁ আসনটি জাতীয় পার্টির জন্য ছেড়ে দেয়। এর ফলে দুইবারই বড় ব্যবধানে এমপি নির্বাচিত হোন লিয়াকত হোসেন খোকা। তবে সর্বশেষ নির্বাচনে এই আসনটি জাতীয় পার্টির জন্য ছেড়ে না দেওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের নিকট তার পরাজয় ঘটে। পরাজয়ের পর থেকে তখন সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে নিষ্ক্রীয় হয়ে তিনি ঢাকার রাজনীতি সক্রিয় হোন। তবে গত দুই মাস ধরে ফের জেলার রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন তিনি। এর ফলে তাকে ঘিরে ফের আশার আলো দেখতে পারছেন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। কিন্তু আওয়ামী লীগের পতনের পর আবারও একই দশা হয় জাতীয় পার্টির এই প্রেসিডিয়াম সদস্যের। বর্তমানে তিনি বেকায়দায় রয়েছেন। যতোদিন নাগাদ আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে কামব্যাক করতে না পারছেন খোকাও ততোদিন রাজনীতিতে আর আসতে পারছেন না। সেই সঙ্গে আগামীতে তার রাজনীতি করার সুযোগ ক্ষীণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির অন্যতম প্রভাবশালী এমপি হিসেবে সারাদেশে পরিচিত ছিলেন একেএম সেলিম ওসমান। একাধিক নেতিবাচক কর্মকান্ডে সংবাদমাধ্যমে বেশ আলোচনায় ছিলেন তিনি। ২০১৪ সালে বড় ভাই এ কে এম নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর আসনটিতে উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সেলিম ওসমান। এরপর ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হন। ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হোন তিনি। দুইবারই এই আসনে মহাজোটের শরিক জাপাকে ছাড় দিয়ে কোনো প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। এর ফলে প্রত্যেকবারই বড় ব্যবধানে এমপি নির্বাচিত হোন তিনি। আওয়ামী লীগের সময়ে সমঝোতার মাধ্যমে টানা সাত বার গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ এর সভাপতি হয়েছিলেন তিনি। তবে আওয়ামী লীগ সরকার পতনে সবকিছু হারিয়েছেন তিনি।