সিদ্ধিরগঞ্জ মহাসড়ক যেন ময়লার ভাগাড়, সাড়িবদ্ধ বর্জের গাড়ি


নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) এর ১ ও ৩ নং ওয়ার্ডের বাসাবাড়ি, হাসপাতাল ক্লিনিক ও কলকারখানার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল, মুক্তিনগর, মাদানিনগর, মৌচাক ও পাইনাদি এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে। এতে সড়কের পাশে সৃষ্টি হচ্ছে ময়লার ভাগাড়।

অন্যদিকে পাইনাদি দশতলা এলাকায় জনবহুল স্থানে ফুটপাত দখল করে দিনভর সাড়িবদ্ধভাবে দাড়িয়ে থাকে আবর্জনা ভর্তি ভ্যানগাড়ি। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

বিশেষ করে মহাসড়কে প্রতিনিয়ত চলাচলকারী ও আশপাশের স্থানীয় বাসিন্দারা রয়েছেন অধিক ঝুঁকিতে। এছাড়াও ফুটপাত দখল আবর্জনা ভর্তি ভ্যানগাড়ি থাকায় পথচারীদের হাঁটতে হয় ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কের মূল অংশে নেমে। এতে মহাসড়কের ওই অংশে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট এবং প্রায় সময়ই ঘটছে বিভিন্ন দূর্ঘটনা।

এদিকে নাসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অনিয়মে ক্ষোভে ফুঁসে উঠছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এর থেকে পরিত্রান পেতে নাসিক মেয়র বরাবর আবেদন করলেও এর কেনো সুরাহা পাচ্ছেন না তারা।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রতি বাসা থেকে মাসিক ১৫০ টাকা করে আদায় করছেন বর্জ্য নিষ্কাশনের কাজে নিয়োজিত লোকজন। এরপরও তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকতে হচ্ছে। নিয়মিত সিটি করপোরেশনের ট্যাক্স পরিশোধের পরও বর্জনিষ্কাশনের নামে ওই দুই ওয়ার্ড থেকে গড়ে ১৬ হাজার পরিবার থেকে অতিরিক্ত ২৩ লাখ টাকার বেশি আদায় হলেও এরকোনা সুফল পাচ্ছেনা ওয়ার্ডবাসীরা।

সরেজমিন দেখা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল মোড় পর্যন্ত চার কিলোমিটার এলাকার কয়েকটি স্থানেই তৈরি হয়েছে বর্জ্যের ভাগাড়। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা, হাসপাতাল ও বাসাবাড়ির বর্জ্য ফেলা হচ্ছে মহাসড়কের পাশে।

মাদানীনগর, মুক্তিনগর ও মৌচাক এলাকায় সৃষ্টি হচ্ছে বিশাল ময়লার ভাগাড়। অনেকস্থানে ময়লা ফেলে পানি নিষ্কাশনের খালও ভরাট করা হয়েছে। এতে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতারও সৃষ্টি হচ্ছে ডিএনডি অধ্যুষিত এলাকায়। মহাসড়কের পাশে নিয়মিত বর্জ্যে ফেলার কারণে আশপাশের এলাকার বাতাস দূষিত হচ্ছে। বর্জ্যের উৎকট গন্ধে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

বিশেষ করে পাইনাদি দশতলা এলাকায় জনবহুল স্থানে ফুটপাত দখল করে দিনভর সাড়িবদ্ধভাবে দাড়িয়ে থাকে আবর্জনা ভর্তি ভ্যানগাড়ি। এরসাথেই ঘেষে রয়েছে পদসেতু (ফুটওভার ব্রীজ)। এখান দিয়ে প্রতিদিন কয়েব হাজার মানুষ পারাপার হচ্ছে। আর পারাপারের সময় সকলকে নাকে কাপড় চেপে পাড় হতে দেখা যায়।

স্থাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বর্জ্যে অনেক ‘ডাস্ট পার্টিকল’ রয়েছে, যা বাতাসে ওড়ে। আমরা আবার তা শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করি। ফলে আমাদের ফুসফুস আক্রান্ত হচ্ছে, নানা ধরনের রোগবালাই বাড়ছে। আমাদের ফুসফুস একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত ‘ডাস্ট পার্টিকল’ গ্রহণ করতে পারে। এর চেয়ে বেশি হলেই আমরা রোগে আক্রান্ত হই।

এছাড়া এসব বর্জ্য থেকে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসজনিত রোগ ছড়াতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি রয়েছে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস ও ফুসফুস ক্যান্সারের। কাজেই এভাবে উন্মুক্ত স্থানে ময়লা-আবর্জনা বা বর্জ্য ফেলে রাখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

নাসিক ১ং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মানিক বলেন, একসময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে বেড়াতাম। এখন আর সেই পরিবেশ নেই। মহাসড়কের পাশে রাখা বর্জ্যের দুর্গন্ধে হাঁটা তো দূরের কথা বমি চলে আসে। বিভিন্ন এলাকা থেকে বর্জ্য সংগ্রহকরা বর্জ্য ভর্তি ভ্যানগাড়িগুলো দশতলা এলাকায় মহাসড়কের পাশে দিনভর ফেলে রাখে।

এসব বর্জ্যের কারণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ময়লা নিয়ে আরাজকতা বা কারসাজি তো রয়েছেই।

বেসরকারি চাকুরিজীবি সেলিম আহমেদ প্রতিদিন ঢাকার যাক্রাবাড়ি থেকে কাঁচপুর আসেন অফিস করতে। তিনি বলেন সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড পেরোলেই মহাসড়কের পাশে রাখা বর্জ্যের কারণে গাড়িতে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক যাত্রী দুর্গন্ধের কারণে গাড়িতেই বমি করেন।

তিশা পরিবহনের চালক হায়দার জানান, কিছুদিন আগেও মহাসড়কে গাড়ি চালানোর সময় বিশুদ্ধ বাতাস পেতাম। এখন বর্জ্যের দুর্গন্ধে গাড়ি চালাতেই ইচ্ছা করে না।

প্রতি পরিবার থেকে ১৫০ টাকা করে আদায় ও মহাসড়কের পাশে বর্জ্য ভর্তি ভ্যান গাড়ি দিনের পর দিন রাখার বিষয়ে জানতে নাসিক ১ নং ওয়ার্ডে বর্জ্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিক ঠিকাদার হাসানের দুটি মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *