আলোরধারা ডেস্ক:
রংপুরসহ আশপাশ এলাকার মানুষ ৪ মাসের বেশি সময় থেকে বৃষ্টির দেখা পাচ্ছে না। ফলে খরার ঝুঁকিতে পড়েছে এই অঞ্চল। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ফসলের চাষাবাদে বিরুপ প্রভাব পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া অফিস এই বিষয়কে অস্বাভাবিক আবহাওয়া বলে মনে করছে। এ ধরনের আবহাওয়া সচারচর দেখা যায় না।
এই পরিস্থিতিতে বোরোসহ অন্যান্য ফসল এখন পুরোপুরি সেচ নির্ভর হয়ে পড়ছে। অপরিকল্পতি সেচ যন্ত্র ব্যবহারের ফলে কৃষকদের বাড়তি খরচের পাশাপাশি ভূগর্ভের পানির স্তরও নেমে যাচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বর, ডিসেম্বর এবং চলতি জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের হার প্রায় শূন্যের কোঠায়। অথচ এর আগের বছর এই অঞ্চলে ডিসেম্বরে ৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার, জানুয়ারিতে ৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার ও ফেব্রুয়ারি ৮২ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলেও এবার কোনো বৃষ্টি হয়নি।
মার্চের প্রথম সপ্তাহ চলে গেলেও বৃষ্টির দেখা নেই। ধারণা করা হচ্ছে মার্চ মাসেও কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি নাও হতে পারে। খরা অনাবৃষ্টির কারণে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে কৃষি ক্ষেত্রে। তথ্য মতে, খরার ঝুঁকিতে রয়েছে রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট, রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা।
আবহাওয়াবিদদের মতে, চলতি সালে এই অঞ্চলে এলোমেলো আবহাওয়া বিরাজ করছে। খুব অল্প সময়ের জন্য শীত এসেছিল। অন্য বছর শীতের সময় বৃষ্টি হলেও এবারের প্রেক্ষাপট একেবারে ভিন্ন। বৃষ্টির অভাবে খরা পরিস্থিতি ৪ থেকে ৫ মাস পর্যন্ত বিস্তৃত হতে চলেছে।
এদিকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বোরোসহ অন্যান্য আবাদ সেচ নির্ভর হয়ে পড়েছে। এতে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ বাড়ছে। রংপুরসহ অন্যান্য জেলায় কয়েক লাখ সেচ যন্ত্র দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে পানির স্তর নিচে নেমে গিয়ে কৃষি উৎপাদন হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। আবাদি জমিও সেচ সংকটে পড়ছে। কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ভূ-প্রকৃতি হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। এ বিষয়ে আইন থাকলে তা বাস্তবায়নের কোনো পদক্ষেপ নেই। 
এছাড়া তিস্তা, ধরলা, ঘাঘট, পদ্মা, যমুনাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর স্বাভাবিক পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতিতে দেখা দিয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন।
সূত্র মতে, উত্তরাঞ্চলের রংপুরের বদরগঞ্জ, পীরগঞ্জ ও নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে পানির স্তর সবচেয়ে বেশি নিচে নেমে যায় এই সময়ে। শুকনো মৌসুমে এসব এলাকায় ৩০ থেকে ৪০ ফুটের নিচে পানি পাওয়া যায় না। এসবের মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ির (এলআর) অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু সায়েম জানান, অপরিকল্পিতভাবে সেচযন্ত্র স্থাপনে কৃষকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। নতুন করে গভীর নলকূপ স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
রংপুর অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, অন্য সময় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কিছু বৃষ্টি হলেও এবার বৃষ্টির পরিমাণ শূন্যের কোঠায়। এটাকে অস্বাভাবিক আবহাওয়া বলা যেতে পারে।
