আলোরধারা ডেস্ক:
রাজধানীর স্বনামধন্য (মিটফোর্ড হাসপাতালের) সহকারী অধ্যাপক অসিম চক্রবর্তীকে(৪২) মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে অন্য একটি হাসপাতালের সাবেক নারী কর্মচারীর বিরুদ্ধে।
ওই নারী মাইশা সরকার (২৬) তার বিরুদ্ধে নানা ভাবে কুৎসা রটিয়ে চাঁদা দাবি করে আসছেন। একই সাথে প্রাণ নাশের হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে। ওই নারীসহ তার সহযোগিদের অত্যাচারে চিকিৎসক তার কর্মস্থল পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। অবশেষে তিনি থানা পুলিশ ও আদালতের স্বরণাপন্ন হয়েছেন।
এ ঘটনায় ২০ জুলাই রাজধানীর চকবাজার মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন চিকিৎসক অসিম চক্রবর্তী। এবং ২৮ জুলাই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। বিবাদীরা হলেন- উত্তরা দক্ষিণ খান থানার কেসি হাসপাতালের সামনে নোয়াপাড়াএলাকার মোবাইদুল সরকারের মেয়ে মাইশা সরকার (২৬), একই এলাকার হাফিজ উদ্দিনের ছেলেহোসেন আহম্মেদ তারেক (৩৫) সহ অজ্ঞাত নামা আরও ৪-৫ জন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে অসিম চক্রবর্তী কর্মরত রয়েছেন। তিনি চেম্বার প্র্যাকটিস করার জন্য ঢাকার দক্ষিণ খান থানার নোয়াপাড়া এলাকার কেসি হাসপাতালে নিয়মিত রোগিদের সেবা প্রদান করে আসছেন। সেখানে মাইশা সরকার ডক্টর এ্যাটেনডেন্স হিসেবে কাজ করতেন। সেই সূত্র ধরে তাদের দুজনের পরিচয় ছিল। ডাক্তার অসিম চক্রবর্তী প্রাকটিস করা কালীন সময়ে তার চেম্বারে ডক্টর এ্যাটেনডেন্স হিসেবে দুই মাস কাজ করেছেন মাইশা সরকার। রোগি ও রোগির স্বজনদের সাথে মাইশা চিৎকার-চেচামেচি সহ খারাপ ব্যবহার করতেন।
এতে রোগি ও তাদের স্বজনরা এ ব্যাপারে মৌখিকভাবে ডাক্তার অসিমের কাছে অভিযোগ করলে তিনি মাইশা কে সতর্ক করে দেন। এতেও কোন কাজ না হলে ডাক্তার অসিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে তার ব্যাপারে অবহিত করে। এর ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মাইশা সরকারকে ডক্টর এ্যাটেনডেন্স এর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রিসিপশন ডেস্কের দায়িত্ব দেন। এতে মাইশা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এর ধারাবাহিকতায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও মানহানীকর অপপ্রচার চালায় এবং কুৎসা রটায়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরিচ্যূত করে। তিনি আরও ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিশোধ নিতে ডাক্তার অসিম চক্রবর্তী কেসি হাসপাতালে যাওয়ার সময় মাইশা সরকার স্থানীয় বখাটে ছেলেদের তার পেছনে লেলিয়ে দেয় এবং প্রাণনাশের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এছাড়াও মাইশা তাকে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দিয়ে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করবে বলে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এতে ডাক্তার অসিম কর্মস্থল পরিবর্তন করে উত্তরা পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রাকটিস শুরু করে। কিন্তু মাইশা তাতেও খান্ত হয়নি। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে হুমকি দেওয়া সহ মোটা অংকের টাকা দাবি করে আসছেন। অথচ ওই নারী ইসলাম ধর্মাবলম্বী ও বিবাহিত এবং ডাক্তার অসিম একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও বিবাহিত। এরপরও মাইশা সরকার অপপ্রচার চালিয়ে আসছেন ডাক্তার অসিম তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে।
গত ১৯ জুলাই সকালে ডাক্তার অসিম তার বাসা থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাজধানীর চক বাজার মোগলটুলি রোডের ইমামগঞ্জ মোড়ে পৌঁছলে মাইশা সরকার সহ আরও অজ্ঞাত তিন জন মিলে তার পথ আটকায় এবং শার্টের কলার ধরে লাঞ্ছিত করে। এসময় তারা হুমকি দিয়ে বলে, ‘তুই বেশি দিন বাঁচবি না, তোকে মেরে ফেলবো।’ এ ঘটনায় ২০ জুলাই চকবাজার মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়, যার নং ৮২৯। পরে ২৮ জুলাই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। এই খবর শুনে প্রতিপক্ষ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এর আগে ৩০ জুন আসামি মাইশাকে ধর্ষণ করা হয়েছে উল্লেখ করে অসিমকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়। মূলত এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে চাঁদা আদায় করাই তার উদ্দেশ্য। তাছাড়া অসিম ওই লিগ্যাল নোটিশের জবাবে ঘটনা অস্বীকার করার পর থেকে বিবাদীরা সরাসরি চাঁদাদাবি করে আসছেন।
এদিকে ১ আগস্ট সন্ধ্যা ৬ টায় অসিম তার চেম্বারে প্রাকটিস শেষে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পূর্ব পাশের সড়কে পৌছলে হঠাৎ করে ১ ও ২ নং বিবাদী সহ অজ্ঞাত নামা ৪-৫ জন সন্ত্রাস প্রকৃতির লোক মোটরসাইকেল যোগে বাদীর সামনে এসে দাঁড়ায় এবং ১ ও ২ নং আসামি বাদীর জামার কলার চেপে ধরে এলোপাথারি চড়-থাপ্পর, কিল-ঘুষি মারে। এবং বিশ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে বলে, ‘চাঁদা দিবি নাকি চাকরী খামু, ধর্ষণ মামলা দিমু, তোরে জেল খাটামু।’ এ সময় অসিমের সাথে থাকা দুজন সহকারী চিকিৎসক তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে। আসামিরা তাদের ওপর চড়াও হয়। এতে দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনায় তাদের শরীরের জামা-কাপড় ছিড়ে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলা-ফুলা জখম হয়। এসময় আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে তারা হুমকি দিয়ে চলে যায়।