ফ্রান্স এর রেল কর্মিদের ধর্মঘট
ফ্রান্স প্রতিনিধিঃ আনাজেত উল্লাহ,
শ্রমক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর সংস্কার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফরাসি রেলকর্মীরা দু’দিন অন্তর তিনদিন করে ধর্মঘট করতে চলেছেন৷ এর ফলে আগামী তিন মাসে ফরাসি রেল ব্যবস্থায় ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটতে পারে৷ ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় রেল প্রতিষ্ঠান এসএনসিএফ-এর কর্মীরা সোমবার রাত্রে তাঁদের তিন মাসব্যাপী ধর্মঘট শুরু করেন৷ জ্বালানি ও আবর্জনা পরিষ্কার বিভাগের কর্মীরাও এই ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করবেন বলে প্রকাশ৷ ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ সাধারণ উপযোগিতামূলক সেবাগুলিতে অধিকতর প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করতে চান৷ মাক্রোঁর অপরাপর অর্থনৈতিক সংস্কার সংক্রান্ত উদ্যোগগুলি এ পর্যন্ত বিশেষ বাধার সম্মুখীন হয়নি৷ অপরদিকে ফ্রান্সের শক্তিশালী শ্রমিক সংগঠনগুলিকেও এবার তাদের শক্তির পরিচয় দিতে হবে৷ আগামী জুন মাস অবধি এসএনএফসি রেলকর্মীরা প্রতি পাঁচ দিনের মধ্যে দু’দিন করে কাজ করবেন৷ ফ্রান্সে প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ প্রতিদিন রেল ব্যবহার করে থাকেন৷ ৮৫ শতাংশ এক্সপ্রেস ট্রেন ও ৭৫ শতাংশ লোকাল ট্রেন চলবে না বলে এসএনএফসি জানিয়েছে৷ লন্ডন ও বেলজিয়াম অভিমুখে ইউরোস্টার ট্রেনগুলির তিন-চতুর্থাংশ চালু থাকবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে; বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডস অভিমুখে অধিকাংশ ‘থালিস’ ট্রেনও চালু থাকবে – কিন্তু স্পেন, ইটালি ও সুইজারল্যান্ডগামী প্রায় সব ট্রেন বন্ধ থাকার আশঙ্কা রয়েছে৷ ময়লা ফেলা বিভাগের কর্মী ও জ্বালানি বিভাগের কর্মীরাও এই রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত কর্মক্ষেত্রগুলির সংস্কারের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ধর্মঘট করবেন৷ পৃথকভাবে এয়ার ফ্রান্স সংস্থার কর্মীরাও বেতনবৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘট করবেন, যার ফলে বিমান পরিবহণও ব্যাহত হবে৷ এসএসসিএফ-এর প্রধান গিলোম পেপি জানেন যে, এই ব্যাপক ধর্মঘটের ফলে ফ্রান্সে বহু মানুষ বিপাকে পড়বেন৷ ‘‘আমি খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, …ধর্মঘটে বহু কর্মী অংশ নেবেন, যার ফলে বেশ কিছু মানুষের দুর্ভোগ হবে,” বলেছেন পেপি৷ ‘‘ফ্রান্সের মানুষ অযৌক্তিক কারণে তিন মাসের বিশৃঙ্খলা সহ্য করতে চান না,” একটি সাপ্তাহিক পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন ফরাসি পরিবহণ মন্ত্রী এলিসাবেথ বর্ন৷ ফ্রান্সের মুখ্য জাতীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির অন্যতম সিজিটি-র প্রধান ফিলিপ মার্তিনে ফরাসি বেতারকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ‘‘(রেল) একটি সাধারণ সেবা; কাজেই আমরা বেসরকারি প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে৷” মাক্রোঁ যে রেলকর্মীদের সুযোগ-সুবিধা হ্রাসের প্রস্তাব দিয়েছেন, তা ফ্রান্সের জাতীয় রেল ব্যবস্থাকে বেসরকারি মালিকানায় প্রদান করার পথে প্রথম পদক্ষেপ বলে এসএনএফসি-র আশঙ্কা৷ এ ধরনের একটি ব্যাপক শিল্পধর্মঘটের ফলে মাক্রোঁ তার প্রস্তাবাবলী সংশোধন করতে বাধ্য হতে পারেন, অতীতে অপরাপর ফরাসি প্রেসিডেন্টকে যা করতে হয়েছে৷ অপরদিকে ফরাসি শ্রমিক সংগঠনগুলির আর আগের মতো ব্যাপক জনসমর্থন নেই, যার ফলে এবারের ধর্মঘট সাধারণের সহানুভূতির পরিবর্তে রোষের সৃষ্টি করতে পারে৷ ফ্রান্সের অর্থনৈতিক রূপান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মাক্রোঁ গতবছর নির্বাচিত হন এবং গত অক্টোবর মাসে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে শ্রমবাজারের সংস্কারের ব্যবস্থা করেন, যা বিশেষ কোনো প্রতিবাদের সম্মুখীন হয়নি৷ কিন্তু ঋণগ্রস্ত সরকারি রেল ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আরো প্রতিযোগিতামূলক করার উদ্দেশ্যে মাক্রোঁ এসএনএফসি কর্মীদের ভাতা ও অপরাপর সুযোগ-সুবিধা কর্তনের যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা রেলকর্মীদের কাছে জনপ্রিয় নয় – যেমন জ্বালানি বা আবর্জনা অপসারণ বিভাগের কর্মীরাও মাক্রোঁর অনুরূপ সব পরিকল্পনা গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন না৷ কাজেই আগামী তিন মাসে ফ্রান্সে বা ফ্রান্স অভিমুখে রেলযাত্রায় বিলম্ব ঘটা বা শহরের পথেঘাটে জঞ্জাল পড়ে থাকায় আশ্চর্য কিছু থাকবে না৷