জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত থাকে ভরা শ্রাবণ। আর শ্রাবণ মানে ভরা বর্ষা, ঝুমবৃষ্টি। আকাশজুড়ে দিনভর মেঘ। কিন্তু গরমের পর প্রশান্তির এই ঋতু এবার উল্টো আচরণ করছে। যুক্তরাজ্যের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা বলছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে বাংলাদেশে শ্রমিকদের কর্মক্ষমতা কমছে। তাঁদের মধ্যে দুই খাতের শ্রমিক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ বছর জুলাই মাসে ছিল এযাবৎ পৃথিবীতে সবচেয়ে গরম দিনের রেকর্ড। ২০১৬ সালে বিশ্বে গড় সবচেয়ে উষ্ণ তাপমাত্রার যে রেকর্ড ছিল, এবারের তাপমাত্রা তাকে ছাড়িয়ে গেছে। এবার প্রথমবারের মতো পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১৭ সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু পর্যবেক্ষক সংস্থা কোপার্নিকাস জানাচ্ছে ৬ জুলাই পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক শূন্য ৮। বিশ্বে যে চরম আবহাওয়া বিরাজ করছে বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। চরম গরম আবহাওয়ার সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশের মানুষের জীবন, জীবিকা ও স্বাস্থ্যের ওপরে পড়ছে।
যুক্তরাজ্যের লিডস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গত সপ্তাহে বাংলাদেশে অতি উষ্ণ তাপমাত্রার প্রভাব নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বাংলাদেশে গরমের কারণে দুই খাতের শ্রমিকেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমত, তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিক। দ্বিতীয়ত, কৃষিশ্রমিক। গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, গরমের কারণে এই দুই খাতের শ্রমিকেরা আগের চেয়ে কম কাজ করতে পারছেন। তাঁদের স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হচ্ছে। আর সামগ্রিকভাবে জাতীয় উৎপাদন কমে আসছে।
লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রানথাম রিসার্চ ইনস্টিটিউট অন ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ও সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিসি যৌথভাবে গবেষণাটি করেছে।
গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, উষ্ণতা যে হারে বাড়ছে, তা অব্যাহত থাকলে ২০৮০ সালের মধ্যে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। আর তাতে এখানকার শ্রমিকদের কর্মক্ষমতা ৪৬ শতাংশ কমে আসতে পারে। জরুরি পদক্ষেপ না নিলে শিল্প ও কৃষি খাত বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে।লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, তাপমাত্রা যদি তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে আর ওই পরিস্থিতির সঙ্গে যদি খাপ খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে আমাদের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির ১ দশমিক ৭ শতাংশ কমে যাবে। আর দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির পরিমাণ ৭ দশমিক ৭ শতাংশ হবে।
চলতি বছরের জুন মাসে বাংলাদেশে সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদি এবং উষ্ণ তাপপ্রবাহ ছিল বলছে ওই গবেষণা। সে সময় দেশের বেশির ভাগ এলাকাজুড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। বাংলাদেশের শ্রমশক্তির ৩৭ শতাংশ কৃষিতে ও ২২ শতাংশ শিল্পকারখানায়। এই শ্রমিকেরা সরাসরি ওই তাপপ্রবাহের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেছে ওই গবেষণা। লিডসের গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, ঢাকায় ২০০১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে জনসংখ্যা ৭৬ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। এই সময়ে ঢাকার সামগ্রিকভাবে তাপমাত্রা বেড়েছে। ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে শহরের কেন্দ্রীয় এলাকার তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকছে।