অনলাইন ডেস্ক:
জুন মাসের পর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বে তেলের দাম ১৬ শতাংশ বেড়েছে। এ নিয়ে টানা পাঁচ সপ্তাহ ধরে তেলের দাম বেড়ে চলেছে। রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর তেলের দাম কমেছিল। এরপর এই প্রথম সবচেয়ে লম্বা সময় ধরে তেলের দাম ঊর্ধ্বগতি বজায় রয়েছে। সিএনএন জানায়, যেসব তেলের ওপর ভিত্তি করে বিশ্ববাজারে এই পণ্যের দামের মানদণ্ড ঠিক করা হয়, তার একটি ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেল। শুক্রবার প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট তেল দশমিক ১ শতাংশ কমে ৮৪ ডলারে দাঁড়ায়। কিন্তু এই দাম গত সপ্তাহের তুলনায় ৩ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। অনেক মাস ধরেই মন্দার একটি আভাস চলছিল। এরই মধ্যে চীনে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হোঁচট খায়। ফলে জ্বালানির চাহিদা বাড়ার সম্ভাবনা বিনষ্ট হয়। সে কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, তেলের দাম তাহলে বাড়ছে কেন?
উৎপাদন হ্রাস:
আন্তর্জাতিক এনার্জি এজেন্সি বলেছিল যে চলতি বছরে বিশ্বে প্রতিদিন তেলের চাহিদা ২২ লাখ ব্যারেল বেড়ে ১০ কোটি ২০ লাখ ব্যারেলে পৌঁছাবে, যা হবে একটি রেকর্ড। কিন্তু এজেন্সির জুলাই মাসের হিসাব বলছে, বাস্তবে প্রতিদিন তেলের চাহিদা দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ১৫ লাখ ব্যারেল, অর্থাৎ চাহিদা বেড়েছে ১৫ লাখ ব্যারেল। তেল সরবরাহে ঘাটতি বেড়েছে ওপেক প্লাস দেশগুলোর উৎপাদন কমানোর কারণে। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ তেল উৎপাদকদের জোট হলো ওপেক প্লাস। ওপেক সদস্যদেশ ছাড়াও এই জোটে রয়েছে রাশিয়া ও আরও কয়েকটি ছোট তেল উৎপাদনকারী দেশ। এই জোট গত এপ্রিলে সিদ্ধান্ত নেয় যে বছর শেষে প্রতিদিন তেলের উৎপাদন ১৬ লাখ ব্যারেল কমানো হবে। গত বছরের তুলনায় তেলের দাম প্রায় ৩৮ শতাংশ কমার পর ওপেক প্লাস জোট এই সিদ্ধান্ত নেয়। বিনিয়োগ ব্যাংক ইউবিএসের বিশেষজ্ঞ জিওভান্নি স্টনোভো সিএনএনকে বলেন, তেলের দামের সাম্প্রতিক মূল্য বৃদ্ধি মূলত এপ্রিলে ঘোষিত ওপেক প্লাসের স্বেচ্ছায় তেলের উৎপাদন কমানোর কারণে ঘটেছে।
চাঙা অর্থনীতি:
ধারণা দেওয়া হয়েছিল যে বিশ্ব মন্দার দিকে যাচ্ছে। এখন অবশ্য এই পূর্বাভাস পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও সুদের হার বৃদ্ধির কারণে বিশ্ব অর্থনীতির গতি ধীর হয়ে পড়বে বলে যে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল, পৃথিবীর বড় কয়েকটি অর্থনীতির ক্ষেত্রে তা শেষ পর্যন্ত ঘটেনি। তেলের ব্যবসায়ীরা এখন মনে করছেন যে প্রতিকূলতা পাড়ি দেওয়া অর্থনীতিতে বরং এখন চাহিদা বাড়বে। একই সঙ্গে সুদের হার যেহেতু সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, তাই প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়বে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ২ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। বছরের প্রথম তিন মাসে প্রবৃদ্ধির যে গতি ছিল, দ্বিতীয় প্রান্তিকে গতি তার চেয়ে বেড়েছে। রেফিনিটিভ বলছে, অর্থনীতিবিদেরা ১ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির যে প্রত্যাশা করেছিলেন, এই হার তার চেয়ে বেশি। ইউরোপ থেকেও কিছু উৎসাহব্যঞ্জক ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ইউরো মুদ্রা ব্যবহার করে যে ২০টি দেশ, তারা চলতি বছরের আরও আগের দিকে মন্দায় পড়েছিল। তবে ফ্রান্স, স্পেন ও জার্মানি থেকে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এই ধারণা পাওয়া যাচ্ছে যে ওই মন্দা সম্ভবত শেষ হয়েছে। বেরেনবার্গ ব্যাংকের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইউরোজোনের অর্থনীতির ক্ষেত্রে ২০২৩ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির যে পূর্বাভাস আমরা করেছিলাম, বাস্তবে অর্থনীতি সম্ভবত তার চেয়ে বেশি সম্প্রসারিত হয়েছে। স্পেনে বেসরকারি ভোগ বৃদ্ধি ও ফ্রান্সে এক দফায় রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে এটা ঘটেছে।’
চীনের প্রণোদনা:
চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। একই সঙ্গে তারা সবচেয়ে বড় তেল আমদানিকারক দেশও বটে। এই দেশটি তেলের দাম বাড়াতে সম্ভবত ভূমিকা রাখছে। গত ডিসেম্বরে চীন তাদের কঠোর ‘শূন্য কোভিড’ নীতি থেকে সরে আসে। তখন অনেকেই ধারণা করেছিলেন যে দেশটির অর্থনীতি খুব দ্রুত চাঙা হবে। শেষ পর্যন্ত তা অবশ্য ঘটেনি, ফলে চলতি বছরের গোড়ার দিকে তেলের দাম কম থাকার পেছনে এটিকে একটি কারণ হিসেবে অনেকেই চিহ্নিত করেন।দেশটির রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের শীর্ষ নীতিনির্ধারক কমিটি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতিকে ‘কষ্টকর’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। তবে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর এক বৈঠকে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ ভোগ বাড়ানো, বেসরকারি ব্যবসাকে সহায়তা করা এবং আবাসন খাত চাঙা করার জন্য রাষ্ট্রীয় নীতিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হবে।