আলোরধারা ডেস্ক:
বিশ্বকাপ শুরুর আগে আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসি বলেছেন, ‘আমি জানি এ মুহূর্তটা বিশেষ। কারণ এটাই সম্ভবত আমার শেষ বিশ্বকাপ, স্বপ্নপূরণের শেষ সুযোগ।’ মেসির মতো ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, লুইস সুয়ারেজসহ বেশ কয়েকজন তারকার বিশ্বজয়ের এটাই হয়তো শেষ সুযোগ। অনেকেই জানিয়ে দিয়েছেন, বিশ্বকাপের পর অবসরে যাবেন। কেউ কেউ আরও কয়েক বছর খেলা চালিয়ে গেলেও আগামী বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখছেন না। কাতারেই বিশ্বজয়ের শেষ সুযোগ যাদের,
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো
রোনালদো এখন পর্তুগাল দলের হয়ে অনুশীলনে ঘাম ঝরাচ্ছেন। এরই মধ্যে জানিয়েছেন, ‘ড্রেসিংরুমের পরিবেশ খুবই চমৎকার। বিশ্বকাপ জিততে চাই।’ ২০১৮ বিশ্বকাপের পরই জানিয়েছিলেন কাতারে শেষ বিশ্বকাপ খেলবেন। রোনালদোর বয়স এখন ৩৭ বছর। ১১৭ গোল করে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বকালের সর্বোচ্চ স্কোরার রোনালদো। পর্তুগালের হয়ে রেকর্ড ১৯১টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয় করা রোনালদো সেরাদের দলেই রয়েছেন। বিশ্বকাপের বড় আকর্ষণ তিনি।
লিওনেল মেসি
আর্জেন্টাইন ফুটবলের প্রাণভোমরা লিওনেল মেসি। আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেশের হয়ে ১৬৪ ম্যাচে ৯০টি গোল করেছেন এই পিএসজি তারকা। বয়স ৩৫ বছর। ক্লাব ফুটবল, জাতীয় দল মিলিয়ে ৪১টি ট্রফি জিতেছেন। আছে চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের তৃপ্তিও। এ পর্যন্ত সাতবার হয়েছেন বর্ষসেরা। ফুটবলের রাজপুত্রের হাতে ওঠেনি শুধু বিশ্বকাপ। শুধু মেসিভক্ত নয়, সত্যিকারের ফুটবলভক্তরাও চান মেসির হাতে উঠুক বিশ্বকাপ। কাতার বিশ্বকাপই তার শেষ বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের লড়াইয়ে শেষবার দেখা যাবে তাকে।। বিশ্বকাপ শুরুর আগে বলেছেন, ‘স্বপ্নপূরণের শেষ সুযোগ।’
অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া
আর্জেন্টাইন শিবিরে বড় আস্থার নাম অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। লিওনেল মেসির সতীর্থ ডি মারিয়া মাঠে থাকা মানেই প্রতিপক্ষের কপালে দুশ্চিন্তার আরও একটি কারণ বাড়ল। অ্যাটাকার হিসেবে চেনে তাকে ফুটবলভক্তরা। ৩৪ বছর বয়সী ডি মারিয়া আর্জেন্টিনার হয়ে ১২৪টি ম্যাচ খেলেছেন। দেশের জার্সিতে ২৪টি গোল রয়েছে তার। ডি মারিয়া ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত খেলেছেন পিএসজিতে। জিতেছেন পাঁচটি লিগ শিরোপা। ২৯৫ ম্যাচে ৯২টি গোল করেছেন তিনি। সাত বছরের ক্যারিয়ারে ১১২টি অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি।
গত বছর কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ১-০ গোলে জিতেছিল আর্জেন্টিনা। জয়সূচক গোল এসেছিল ডি মারিয়ার পা থেকেই। কাতার বিশ্বকাপের পরেই আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানাতে চলেছেন তিনি। বলেছেন, ‘নিজের জন্য না হলেও শুধু মেসিকে স্মরণীয় করে রাখতে কাতার বিশ্বকাপ জিততে চাই।’
রবার্ট লেভানদোভস্কি
গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে ‘গোলমেশিনে’ পরিণত হয়েছেন লেভানদোভস্কি। এখন তার বয়স
৩৪ বছর। হয়তো এটাই শেষ বিশ্বকাপ। জার্মান বুন্দেসলিগায় বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে চার বছর, পরে বায়ান মিউনিখে আট বছর গোল করে গেছেন লেভানদোভস্কি। বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার আগে ডর্টমুন্ড ও মিউনিখের হয়ে ৩৮৪টি ম্যাচে ৩১২ গোল করেছেন তিনি। পোল্যান্ডের অধিনায়ক লেভানদোভস্কি দেশের হয়ে ১৩৪টি ম্যাচে রেকর্ড ৭৬টি গোল করেছেন। এর মধ্যে বিশ্বকাপ বাছাই-পর্বে নয়টি। বিশ্বকাপ বিরতির আগে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৯ ম্যাচে গোল করেন ১৮টি। লেভানদোভস্কি টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ খেলবেন।
এদিনসন কাভানি
উরুগুয়ের স্ট্রাইকার এদিনসন কাভানিকে হয়তো শেষবারের মতো বিশ্বকাপে দেখা যাবে। ৩৫ বছর বয়সে এই বিশ্বকাপ শুরু করবেন তিনি। এখন পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে ১২৯টি ম্যাচ খেলে ৫৬টি গোল করেছেন কাভানি। যার মধ্যে অ্যাসিস্ট আছে ১৭টি। ক্যারিয়ারজুড়ে তিনি মোট ২৫টি ট্রফি জিতেছেন এবং যেখানেই খেলেছেন সেখানেই গোল উদযাপন করেছেন। এদিনসন কাভানি বিশ্বের সেরা স্ট্রাইকারদের একজন। তার গোলস্কোরিং রেকর্ডেই তা প্রমাণিত।
লুইস সুয়ারেজ
লুইস আলবের্তো সুয়ারেজের বয়স এখন ৩৫ বছর। ২০২৬ বিশ্বকাপে সুয়ারেজের বয়স হবে ৩৯। সেই আসরে তিনি খেলবেন কি না তার নেই কোনো নিশ্চয়তা। কাতারেই বিশ্বকাপ জয়ের শেষ সুযোগ তার। ক্লাব ফুটবলে অর্জনের খাতাটা বেশ সমৃদ্ধ হলেও জাতীয় দলের হয়ে এক কোপা আমেরিকা ছাড়া আর কিছুই নেই সুয়ারেজের ঝুলিতে। ১৫ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে কখনই ফুটবলের সর্বোচ্চ মর্যাদার ট্রফিটি ছুঁয়ে দেখা হয়নি সুয়ারেজের। ২০১০ সালে শিরোপার খুব কাছে গিয়েও আক্ষেপে পুড়তে হয়েছিল তাকে। কোয়ার্টার ফাইনালে ঘানার বিপক্ষে হাত দিয়ে নিশ্চিত গোল ঠেকিয়ে উরুগুয়ের জাতীয় নায়কে পরিণত হন এই স্ট্রাইকার। ফুটবলের নিয়মবহির্ভূত কাজ করে দেখেছিলেন লালকার্ডও। ১৩৪ গোল নিয়ে উরুগুয়ের সর্বকালের সর্বোচ্চ স্কোরার লুইস সুয়ারেজ। নিজের চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে নামবেন তিনি।
থমাস মুলার
২০১৪ সালের বিশ্বকাপ জেতার পরে ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের গ্রুপ-পর্ব ও ২০২০ সালের ইউরো কাপের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছে জার্মানিকে। জার্মানির প্রধান ফুটবলার অবশ্যই থমাস মুলার। ফুটবল বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ১৬টি ম্যাচ খেলে ১০টি গোল করেছেন তিনি। নিজের দেশেরই মিরোসøাভ কোজাকে (১৬টি গোল) ছাপিয়ে যাওয়ার সুযোগ তার রয়েছে। ২০১০ বিশ্বকাপে পাঁচটি গোল করেছিলেন ৩৩ বছর বয়সী থমাস মুলার। এরপর থেকে জার্মানি এবং বায়ার্ন মিউনিখের নিয়মিত সদস্য ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে বিশ্বকাপে বাজে পারফরম্যান্সের অজুহাত দিয়ে ২০১৯ সালে মুলারকে বাদ দেন জোয়াচিম লো। কিন্তু গত বছর ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য দলে ফিরিয়ে আনা হয় মুলারকে।
হ্যারি কেইন
২৯ বছর বয়সী হ্যারি কেইন ২০১৫ সাল থেকে ইংল্যান্ড জাতীয় দলে খেলে আসছেন। এ পর্যন্ত ৭৫ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ৫১টি। অভিজ্ঞ এই ফরোয়ার্ড যে কোনো সময় ম্যাচের ভাগ্য বদলে দিতে পারেন। গত বিশ্বকাপে তার গোলেই শেষ ষোলোর চৌকাঠ পার হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল ইংলিশরা। হ্যারি কেইন রাশিয়া বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন। কাতার বিশ্বকাপেও তার পায়ের জাদু দেখবে ফুটবল বিশ্ব। এটাই হয়তো তার শেষ বিশ্বকাপ।
ম্যানুয়েল নয়্যার
জার্মান গোলবারের নিচে যেন প্রাচীর ম্যানুয়েল নয়্যার। ২০১৪ বিশ্বকাপেও জার্মানিদের গোলবার রক্ষায় অবদান রেখে সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার জেতেন তিনি। জার্মানির প্রথম পছন্দের গোলরক্ষকেরও শেষ বিশ্বকাপ হতে পারে এটি। এখন তার বয়স ৩৬।
লুকা মদ্রিচ
ক্যারিয়ারে পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলতে নামছেন ক্রোয়েশিয়ার লুকা মদ্রিচ। ফিফাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্রোট অধিনায়ক লুকা জানিয়েছেন, কাতার বিশ্বকাপে তিনি শেষবার দেশের জার্সি গায়ে চাপিয়ে মাঠে নামতে চলেছেন। এখন তার বয়স ৩৭ বছর। এই বয়সেও তার ধার কমেনি। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে নিজের দশম মৌসুমে খেলছেন তিনি। স্প্যানিশ ক্লাবের হয়ে এক দশকের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন মদ্রিচ। এ সময়ে পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা এবং তিনটি লিগ শিরোপা জিতেছেন মদ্রিচ। এ ছাড়াও ২০১৮ সালে ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন তিনি। ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ডে তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ২০১৮ সালে ক্রোয়েশিয়াকে বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলেছিল।
দানি আলভেস
সর্বকালের সেরা আক্রমণাত্মক রাইট ব্যাকদের মধ্যে একজন ব্রাজিলের ৩৯ বছর বয়সী দানি আলভেস। শেষ দিকে ব্রাজিলের চূড়ান্ত দলে তার নাম উঠে আসায় বিস্ময় ও আলোচনা শুরু হয় চারদিকে। হাঁটুর ইনজুরির কারণে গত বিশ্বকাপ মিস করেছিলেন। দুটি বিশ্বকাপ খেলেছেন আলভেস। ২০১০ এবং ২০১৪ সালে। ২০০৮ সালে বার্সেলোনায় যাওয়ার আগে সেভিয়ার হয়ে খেলার সময় মাঠের ডানপ্রান্ত দিয়ে দুর্দান্ত গতিতে বল নিয়ে ছুটে যাওয়ার খ্যাতি পেয়েছিলেন তিনি।